আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৬ কোটি। ভাইরাসের কেড়ে নিয়েছে ৩৩ লক্ষ প্রাণ। এখনও অব্যাহত রয়েছে মৃত্যুমিছিল। প্রতিদিনই আক্রান্ত হয়ে চলেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। কিন্তু সামান্য সতর্ক হলেই এই পরিণতি দেখতে হত না পৃথিবীকে। সম্প্রতি এমনটাই জানাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। হু’-এর বিশেষ প্যানেলের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি করা হয়, বিশ্বের প্রায় সমস্ত রাষ্ট্রের সরকারই অবহেলা করেছে মহামারীকে। গোটা পরিস্থিতিতে করে তুলেছে ‘টক্সিক ককটেল’।
হু’-এর সদস্য ছাড়াও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গবেষকদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল এই বিশেষজ্ঞ প্যানেল। উত্তরোত্তর ভয়াবহ হতে থাকা পরিস্থিতির পর্যালোচনা করাই ছিল এই দলের প্রধান লক্ষ্য। সেই মূল্যায়নেই উঠে আসে সঠিক সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিলেই এত ব্যাপক আকার ধারণ করত না কোভিড মহামারী। পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর পরিবর্তন না করলে অদূর ভবিষ্যতে আবারও মহামারীর সম্মুখীন হতে পারে পৃথিবীকে, সেই সতর্কতাও দিয়ে রেখেছেন বিশেষজ্ঞরা।
রিপোর্ট জানানো হয়েছে, কোভিডের প্রথম তরঙ্গের শুরু থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করেছে প্রতিটা রাষ্ট্র। বিশেষ করে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা ভেবেই লকডাউনের পথে হাঁটেনি শুরুতে। আন্তর্জাতিক পরিবহনেও কোনোরকম বিধি নিষেধ আরোপিত হয়নি সেই সময়। হাসপাতালগুলি প্রায় শয্যাশূন্য হয়ে পড়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রতিটা দেশের প্রশাসন। কিন্তু ততদিনে হাতে গোনা কয়েকটা দেশ থেকেই গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস।
তবে শুধু প্রতিটা রাষ্ট্রের অবহেলা নয়, এই রিপোর্ট কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও। নিজের সমালোচনা করেই হু জানিয়েছে শুরুতে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেছিল তারাও। ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি আয়োজিত সভাতেই জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করলে হয়তো এতটা মারাত্মক হয়ে উঠত না মহামারী। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ৩০ জানুয়ারি। এই মাত্র এক সপ্তাহের মেয়াদকেও বেশ গুরুত্ব দিয়েই দেখছে হু-এর বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন
সংক্রমণ-পরবর্তী ৫-১০ দিনকে বিশেষ গুরুত্ব দিন, পরামর্শ চিকিৎসকদের
এখানেই শেষ নয়। বর্তমানেও প্রতিনিয়তই একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে প্রতিটা দেশ। প্রতিটা দেশই শুধু ভাবছে নিজেদের স্বার্থের কথা। এমনই অভিযোগ তুলেছে এই রিপোর্ট। স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে দরিদ্র দেশগুলিতে ভ্যাকসিনেশনের জন্য কোভ্যাক্স প্রকল্প থমকে রয়েছে প্রভাবশালী দেশগুলির জন্য। প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও, হু-এর হাতে এসে এখনও পৌঁছায়নি ১.৯ বিলিয়ন ডলারের অনুদান। ভ্যাকসিনেশন প্রকল্পের এই থমকে থাকাই মহামারীর আরও বিস্তারলাভের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলছে। অন্যদিকে অনেক দেশ প্রকাশ্যে আনছে না আসল তথ্যও।
আরও পড়ুন
‘আইভারমেকটিন’ ম্যাজিক ড্রাগ নয়, ডেকে আনতে পারে বিপদও; জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা
সবমিলিয়ে হু-এর কথায় স্পষ্ট, মহামারীর এই বাড়বাড়ন্তের পিছনে দায়ী মানুষই। বিজ্ঞানীদের তথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শকে প্রথম থেকেই উপেক্ষা করে গেছেন রাষ্ট্রপ্রধানরা। এই চরমতম অসচেতনতাকে ‘একবিংশ শতাব্দীর চের্নোবিল মুহূর্ত’ হিসাবে অভিহিত করেছে হু। গোটা বিষয়টার ওপরে কড়া নজরদারি চালাতে যে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা কড়া ভাষায় জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জানানো হয়েছে, এই নজরদারির জন্য তৈরি করা হবে বিশেষ কাউন্সিল। সেখানে ভুল পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্তের জন্য জবাবদিহি করতে হবে প্রতিটি রাষ্ট্রকেই। সেই সঙ্গে সতর্ক করা হয়েছে এই মুহূর্তে প্রতিটা রাষ্ট্র নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির কথা ভাবলে, কখনোই আয়ত্তে আসবে না মহামারী…
আরও পড়ুন
করোনার ভারতীয় স্ট্রেন ‘গ্লোবাল কনসার্ন’, উল্লেখ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র
Powered by Froala Editor