অতিরিক্ত সময় কাজ করায় মৃত্যু ৭ লক্ষাধিক কর্মীর, জানাচ্ছে হু-এর সমীক্ষা

বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে ‘ওয়ার্কাহলিক’ কথাটার সঙ্গে কম-বেশি পরিচিত সকলেই। সর্বক্ষণ নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করেন অনেকেই। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাধ্য হয়েই কাজে ডুবে থাকতে হয় মানুষকে। তবে অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করাই ত্বরান্বিত করে মৃত্যুর সম্ভাবনাকে। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট পেশ করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা। কর্মসময় নিয়ে এর আগেও একাধিক বিতর্ক উঠেছে বার বার। তবে অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করার সঙ্গে মৃত্যুর সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা এই প্রথম।

২০১৬ সালে গোটা বিশ্বজুড়ে শ্রমিক এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছিল হু এবং আইএলও। বিগত পাঁচ বছর ধরে তার বিশ্লেষণের পরই এই রিপোর্ট প্রকাশ করল তারা। সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে শুধু ২০১৬ সালেই অতিরিক্ত কর্মসময়ের কারণে মৃত্যু হয়েছে ৭ লক্ষ ৪৫ হাজার মানুষের। যাঁদের সাপ্তাহিক কর্মসময় ৫৫ ঘণ্টা কিংবা তার বেশি— তাঁরাই মূলত এই অকালমৃত্যুর শিকার। গাণিতিক হিসাব বলছে বিগত দেড় দশকে এমন ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৯ শতাংশ।

হু-এর দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী আক্রান্তদের ৭২ শতাংশই পুরুষ। ৪৫ থেকে ৭২ বছর বয়সী কর্মীদের মধ্যে এই অকালমৃত্যুর হার সবথেকে বেশি। হু-এর রিপোর্ট রিপোর্ট জানাচ্ছে অতিরিক্ত কাজ করার কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় ১৭ শতাংশ। অন্যদিকে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায় স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা। সেই তুলনায় সপ্তাহে ৩৫-৪৫ ঘণ্টা যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা অনেকটাই নিরাপদ এই ঝুঁকি থেকে। 

তবে বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি আরও চিন্তা বাড়িয়েছে বিশেষজ্ঞদের। মহামারীর কারণে এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কর্মীদের কাজ করতে হচ্ছে বাড়িতে থেকেই। ফলে কর্মসময় এবং সাংসারিক জীবনের মধ্যে বিভেদরেখা কার্যত মুছে গেছে। সারাদিনই তাঁদের কর্মব্যস্ত থাকতে হচ্ছে বাড়িতে থেকেও। শুধু বিগত এক বছরেই গড় কর্মসময় বৃদ্ধি পেয়েছে অতিরিক্ত ৯ শতাংশ। এই ঘটনা আরও বড়ো চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হু-এর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে। দৈনিক কার্যক্রমের সময়সীমার এই হঠাৎ বৃদ্ধি মৃত্যুর সংখ্যাকে আরও খানিকটা বাড়িয়ে দেবে বলেই আশঙ্কা তাঁদের। 

আরও পড়ুন
গণ্ডারের শিং কেটে নিচ্ছেন খোদ সংরক্ষণ কর্মীরাই!

গোটা বিশ্বের মধ্যে অতিরিক্ত কর্মসময়ের জন্য সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। শুধু এই অঞ্চলেই মৃত্যু হয়েছে ৩ লক্ষাধিক মানুষের। তবে শুধু মৃত্যুই নয়, অতিরিক্ত কর্মসময় মানুষের কর্ম-সক্ষমতাকেও হ্রাস করে বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। 

আরও পড়ুন
হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে মাছ খান

সমীক্ষায় চাঞ্চল্যকর এই ফলাফল আসার পরই নড়েচড়ে বসেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও হু। হু-এর পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিচালক মারিয়া নীরা প্রতিটি দেশের কাছেই আবেদন রেখেছেন, যাতে ‘ওভারটাইম’ নিষিদ্ধ করা হয় বাধ্যতামূলকভাবে। পাশাপাশি সপ্তাহে ৪৫ ঘণ্টার বেশি যেন কর্মীদের কাজ করতে না হয়, সেদিকেও নজর দিতে বলছেন তিনি। অন্যদিকে কর্মীদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য সরকার, নিয়োগকর্তা এবং কর্মসংস্থানগুলিকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে আইএলও। তবে একটি সমীক্ষার রিপোর্ট সত্যিই কি বদলে দেবে বর্তমান পৃথিবীর গতানুগতিক ছবি? প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে সেই জায়গাটাতেই।

আরও পড়ুন
মস্তিষ্কের যাবতীয় কাজ ধরা পড়বে অণুবীক্ষণ যন্ত্রেই, আশ্চর্য আবিষ্কার বিজ্ঞানীর

Powered by Froala Editor

Latest News See More