চলতি বছরের শুরু থেকেই হোয়াটসঅ্যাপের প্রাইভেসি পলিসি নিয়ে বিতর্ক চলছেই। বিতর্কের জেরে বারবার প্রাইভেসি পলিসি আপডেটের অন্তিম তারিখ পিছিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে এবার সেই সাময়িক স্থগিতাদেশ দেওয়া হলেও, কার্যত ব্যবহারকারীদের নতুন পলিসি মেনে নিতে বাধ্য করল কর্তৃপক্ষ।
হোয়াটসঅ্যাপের জনপ্রিয়তার পিছনে সবচেয়ে বড়ো কারণ ছিল এর এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন পলিসি। অর্থাৎ ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত কথোপকথনের উপর কোনোভাবেই নজরদারি চালাবে না কর্তৃপক্ষ। তবে হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নেওয়ার পর থেকেই একাধিক বাণিজ্যিক পদ্ধতি আনতে শুরু করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। আর গত জানুয়ারিতে নতুন প্রাইভেসি পলিসিতে কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্যক্তিগত কথোপকথনের ক্ষেত্রে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন পদ্ধতি চালু থাকলেও কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথোপকথনের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে। এবং সেইসমস্ত তথ্য ব্যবহার করা হবে মূলত বিজ্ঞাপনের কাজে। এই উদ্দেশ্যে হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে ফেসবুক প্রোফাইল লিঙ্ক করা বাধ্যতামূলক বলেও জানায় কর্তৃপক্ষ।
হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হলে পলিসি আপডেটের ক্ষেত্রে সাময়িক স্থগিতাদেশ আনে কর্তৃপক্ষ। অবশেষে জানানো হয়, ১৫ মে তারিখের মধ্যে যাঁরা এই আপডেটে সম্মতি জানাবেন না, তাঁদের অ্যাকাউন্ট ডিলিট করা হবে। তবে কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী কারোর অ্যাকাউন্ট ডিলিট করা হবে না। তবে যতক্ষণ তাঁরা পলিসি আপডেটে রাজি না হবেন, ততক্ষণ তাঁরা প্ল্যাটফর্মটির একাধিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। এর জন্য কর্তৃপক্ষ প্রথমে ব্যবহারকারীর কাছে সতর্কবার্তা পাঠাবে। সেই সতর্কবার্তা গ্রাহ্য না করলে প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপ কল পরিষেবা বন্ধ করা হবে। তারপর বন্ধ করা হবে মেসেজিং পরিষেবাও। অর্থাৎ অ্যাকাউন্ট ডিলিট করা না হলেও কার্যত সেই অ্যাকাউন্ট আর কোনো কাজে লাগবে না। আর ১২০ দিন অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা না হলে সংস্থার পুরনো পলিসি অনুযায়ী সেই অ্যাকাউন্ট ডিলিট করা হবে।
নতুন পলিসি আপডেট অনুযায়ী হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বাণিজ্যিক কথোপকথন ট্র্যাক করে তথ্য সংগ্রহ করবে। সেই তথ্য অন্যান্য বাণিজ্যিক সংস্থার কাছে বিক্রি করা হবে, যাতে তাঁরা তা বিজ্ঞাপনের কাজে লাগাতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, ব্যক্তিগত কথোপকথনের থেকে বাণিজ্যিক কথোপকথন আলাদা করে চিহ্নিত করার উপায় আসলে কী? নাকি সমস্ত স্তরেই একধরণের নজরদারি চলবে? আসলে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের বিষয়টিই তাহলে একধরণের প্রতারণা হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন অনেকে। এই আশঙ্কা থেকেই বহু গ্রাহক ইতিমধ্যে বিকল্প মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম বেছে নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ফেসবুক কর্তৃপক্ষের এই অনড় সিদ্ধান্তে অবাক সকলেই।
আরও পড়ুন
গোলাপি হোয়াটসঅ্যাপ - ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ফাঁদ?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ইতিহাসের বৃহত্তম ও দ্রুততম ডিজিটাল পরিযায়ন, হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে টেলিগ্রামে রাষ্ট্রনেতারাও