১৯৮২-র ফুটবল বিশ্বকাপ। স্পেনের গিহন শহরের স্টেডিয়ামে ভিড় ভেঙে পড়েছে। অস্ট্রিয়া বনাম পশ্চিম জার্মানি। কিন্ত দর্শকাশনের অধিকাংশ ভরিয়ে দিয়েছেন আলজেরিয়ার সমর্থকরা। এই প্রথমবার অসাধারণ খেলছে দল। গ্রুপ স্টেজ থেকে কোয়ালিফাই করে পরের রাউন্ডে খেলার স্বপ্ন দেখছে আফ্রিকার ছোট্ট দেশটা।
ইতিহাসটা বলে নেওয়া উচিত তার আগে। আলজেরিয়ার প্রথম ম্যাচ পড়েছিল পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে। গতবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানদের তখন মাটিতে পা-ই পড়ছে না। ধরেই নিয়েছে জয় অনিবার্য। তাই অতিরিক্ত খেলোয়াড়ের সংখ্যা কম। ইচ্ছে করেই আনেননি কোচ। পুঁচকে আলজেরিয়াকে সিগার টানতে টানতেই হারিয়ে দেবেন, এমন দাবিও করে বসেছেন একজন খেলোয়াড়। কিন্তু, প্রথম ম্যাচেই অঘটন। ২-১ গোলে দর্পচূর্ণ জার্মানদের। পরের ম্যাচে আলজেরিয়া হারল অস্ট্রিয়ার কাছে। ০-২ গোলে। এদিকে তিনটি দেশই হারিয়েছে চিলি-কে। কিন্তু গোলের ব্যবধানে আবার এগিয়ে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া । সুতরাং জার্মানি-অস্ট্রিয়া ম্যাচে যদি জার্মানি হারে, তবেই প্রথম আরব-আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের পরের রাউন্ডে আলজেরিয়ার জায়গা পাকা।
খেলা শুরু হল। প্রথম দশ মিনিটের মাথায় ক্রস থেকে গোল পেল পশ্চিম জার্মানি। তার পরের আশি মিনিট ফুটবলের ইতিহাসে নজির গড়ল। কালো নজির। পাসের পর পাস। আক্রমণ নেই। গা এলিয়ে দুই দলের খেলোয়াড়রা। গ্যালারি থেকে ভেসে আসে টিটকারি। সমর্থকদের ক্রুদ্ধ গর্জন। শুধু আলজেরিয়া নয়, জার্মান আর অস্ট্রিয়ার ফ্যানেরাও ফেটে পড়েছেন রাগে। এমন দায়সারা ম্যাচ দেখবেন, এই আশা তো ছিল না। অস্ট্রিয়ান ধারাভাষ্যকার দর্শকদের টেলিভিশন বন্ধ করে দিতে বলেন। সবার ধারণাই বদ্ধমূল। যা ঘটছে, সবটাই পূর্বনির্ধারিত। ম্যাচ শেষ হয় আলজেরিয় সমর্থকদের বুকফাটা আর্তনাদে। হাসিমুখে দুই ইউরোপীয় দলের খেলোয়াড় ফেরেন ড্রেসিং রুমে।
আলজেরিয়া পত্রপাঠ আপিল করেছিল ফিফার কাছে। দুই দলের বিরুদ্ধেই। ‘ম্যাচ ফিক্সিং’-এর অভিযোগ কয়েকদিন পরেই অস্বীকার করে ফিফা। উল্লেখ্য, তখন ফিফার প্রেসিডেন্ট ছিলেন একজন জার্মান। তবে, দুই দলের কারচুপিকে রেয়াত করেনি ফুটবল দেবতা। অস্ট্রিয়া পরের স্টেজেই ছিটকে যায়। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে ৩-১ গোলে হারায় ইতালি। এরপর থেকে নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কারচুপি এড়াতে গ্রুপ স্টেজের শেষ দুটি ম্যাচ খেলা হয় একই সময়ে…
আফ্রিকার ছোট্ট দেশটা ভেবেছিল, তাদের স্বপ্ন সত্যি হবে সেদিন। কিন্ত বর্ণবাদী রাজনীতির কাছে হেরেছিল তারা। হেরে গিয়েছিল খেলা।