বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে শিক্ষাক্ষেত্রকে ঢেলে সাজাতে একাধিক প্রকল্প নিয়ে আসছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আর তার সুফলও মিলেছে হাতেনাতে। সম্প্রতি একটি সর্বভারতীয় বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় উঠে এল সেই সাফল্যের খতিয়ান। দেখা গিয়েছে, পাঠ্যপুস্তকের সহজলভ্যতায় সারা দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। আর দেশের মধ্যে তথাকথিত অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত রাজ্যগুলিতে সেই হার অনেকটাই কম।
২০১৫ সাল থেকে বেসরকারি সংস্থা ‘প্রথম’ তাদের বার্ষিক সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে। এই রিপোর্টের নাম অ্যানুয়াল স্টেট অব এডুকেশন বা অসর। এ রাজ্যের ৫০৬টি গ্রামের ৩৫২৬টি পরিবারের মধ্যে সমীক্ষার ভিত্তিতে দেখা গিয়েছে, রাজ্যের ৯৯.৭ শতাংশ পড়ুয়ার কাছেই রয়েছে প্রয়োজনীয় পাঠ্যপুস্তক। নাগাল্যান্ড এবং আসাম রয়েছে পরবর্তী স্থানে। এই দুই রাজ্যে সংখ্যাটা ৯৯.২ এবং ৯৮.৪ শতাংশ। তবে উত্তরপ্রদেশ (৭৯.৬ শতাংশ), মহারাষ্ট্র (৮০.৮ শতাংশ), তেলেঙ্গানা (৬৮.১ শতাংশ), তামিলনাড়ুর (৮৬.৪ শতাংশ) মতো রাজ্য সেখানে অনেকটাই পিছিয়ে আছে।
রাজ্যের শিক্ষক-মণ্ডলীর দাবি, শিক্ষাদপ্তরের ‘বুক ডে’ অনুষ্ঠানের ফলেই এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে। শিক্ষাদপ্তর থেকেই রাজ্যের সমস্ত সরকারি স্কুলে পড়ুয়াদের কাছে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়া হয়। কোথাও পুস্তকের সংখ্যা কম পড়লে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এমনকি গ্রামাঞ্চলেও পড়াশোনার জন্য স্মার্ট টেকনোলজির উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন বহু পড়ুয়াই।
শুধু তাই নয়, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বিগত কয়েক বছর ধরেই রাজ্যে স্কুলছুটের সংখ্যা ক্রমশ নিম্নমুখী। আর এবছর সেই সংখ্যাটা আরও কমেছে। ২০১৮ সালে স্কুলছুটের হার ছিল ৩.৩ শতাংশ। এবছর সেটা নেমে এসেছে ১.৫ শতাংশে। এখানেও ‘সবুজসাথী’, ‘কন্যাশ্রী’-র মতো প্রকল্পকেই সাফল্যের জন্য দায়ী করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সারা দেশে যখন স্কুলছুটের সংখ্যা উর্ধ্বমুখী, তখন এ-রাজ্যে সংখ্যাটা প্রতি বছর কমছে একটু একটু করে। ২০১৮ সালে সারা দেশে স্কুলছুটের সংখ্যা ছিল ৪ শতাংশ। এবছর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৫ শতাংশ। কর্নাটক, তেলঙ্গানা, রাজস্থানের মতো বড় রাজ্যে স্কুলছুটের হার যথাক্রমে ১১.৩, ১৪ এবং ১৪.৯ শতাংশ। সেখানে বাংলার চেহারা সত্যিই অবাক করে।
আরও পড়ুন
লকডাউনে শিক্ষা দিতে ‘ব্যর্থ’ সরকারি স্কুলগুলি, বন্ধের মুখে বেসরকারি স্কুলও - এমনটাই জানাচ্ছে সমীক্ষা
ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলার ভূমিকা কখনোই অস্বীকার করা যায় না। তবে নানা কারণে সেই ছবিটা খানিকটা বিঘ্নিত হয়েছিল। আবারও উপযুক্ত পরিকল্পনার ফলেই মিলতে চলেছে সাফল্য। ‘প্রথম’-এর এই সমীক্ষা সেই পরিবর্তনকেই নির্দেশ করছে।
আরও পড়ুন
কলেজের মেধাতালিকায় পর্নস্টারদের নাম; শিক্ষাব্যবস্থার ‘ঠাট্টা’ই কি নগ্ন হয়ে উঠল আরও?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
শিক্ষাক্ষেত্রে আবার সাফল্য, বাংলার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুকুটে কিউএস আইগজ ই-লিড পুরস্কার