মহামারীর আবহে এই সময়ে সবথেকে বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে শিশু সুরক্ষা। শারীরিক নির্যাতন কিংবা পাচারের ঘটনা তো রয়েইছে। সেইসঙ্গে এক ধাক্কায় বেড়েছে শিশুশ্রম, মানসিক হেনস্থা কিংবা বাল্যবিবাহের মতো ঘটনাও। সজাগ থেকেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু সবসময় তাঁদের নজরেও আসছে না এই ধরনের ঘটনাগুলি। এবার এই অপরাধজগতের রেশ টানতেই অভিনব উদ্যোগ নিল পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগ। এবার শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত সমস্তরকম অভিযোগই জানানো যাবে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে।
গত ৯ জুন, রাজ্য শিশু সুরক্ষা দিবসের দিনই ‘শিশু সুরক্ষা’ নামের অ্যাপ্লিকেশনটি চালু করল রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগ। রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যান মন্ত্রী শশী পাঁজার হাত ধরেই উদ্বোধন হয় অ্যাপটির। অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করেছে ‘ওয়েবট্র্যাকার৪ইউ’ নামের একটি সংস্থা।
“ইতিমধ্যেই এটা পাবলিক ডোমেনে এসে গেছে। গুগল প্লেস্টোর থেকেই নামানো যাবে এই অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি। ভিকটিম নিজে কিংবা যে কোনো ব্যক্তিই শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত যে কোনো ঘটনার অভিযোগ জানাতে পারেন। শুধু খেয়াল রাখতে হবে সেক্ষেত্রে ভিকটিমের বয়স যেন অনূর্ধ্ব আঠারো হয়”, জানালেন খড়গপুর আইআইটির লিড প্রোজেক্ট অ্যাডভাইজার এবং সমাজকর্মী মুহাম্মদ জিম নওয়াজ। ‘শিশু সুরক্ষা’ অ্যাপ্লিকেশনটির লিড অ্যানালিস্ট হিসাবে বর্তমানে কাজ করছেন তিনি।
আরও পড়ুন
২০ বছরে প্রথমবার শিশুশ্রমিকের সংখ্যাবৃদ্ধি, উদ্বেগে ইউনিসেফ
প্রশ্ন থেকে যায়, কীভাবে অভিযোগ জানানো যাবে এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে? জিম নওয়াজ জানালেন, ফোন নম্বর দিয়ে এই অ্যাপ্লিকেশনে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে প্রথমে। তারপরই কোনো শিশু নির্যাতনের ঘটনার অভিযোগ দায়ের করা যাবে এই অ্যাপ্লিকেশনে। জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ঠিকানা। অভিযোগটি গৃহীত হলেই নোটিফিকেশন পাবেন অভিযোগকারী। শুধু তাই নয়, অভিযোগের প্রেক্ষিতে কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন, তাও ক্রমাগত জানাতে থাকবে অ্যাপ্লিকেশনটি। “অভিযোগ জানানোর পর আদৌ কোনো ঘটনার সমাধান হল কিনা সেটা নিয়ে এতদিন ধাঁধাঁর মধ্যে থাকতে হত অভিযোগকারীদের। সেই জায়গাটাও পরিষ্কার হয়ে যাবে। কেসটি সমাধান হওয়া পর্যন্ত সমস্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যই পাওয়া যাবে অ্যাপ্লিকেশনের মারফত। তবে এক্ষেত্রে অভিযোগকারী কিংবা ভিকটিমের কোনো তথ্যই প্রকাশ্যে আনা হবে না। এবং একজন ব্যক্তি যাতে একাধিক অভিযোগ করতে পারে, সেই ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে”, জানালেন জিম। কিন্তু অনলাইন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কীভাবে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন?
আরও পড়ুন
শিশুদের মধ্যে করোনা-সচেতনতা বাড়াতে পথে ‘জোকার’
সেই উত্তর দিলেন শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী, “ অভিযোগগুলি যে জেলা থেকে আসছে, প্রথমে সেখানকার এসপি এবং ডিএমকে জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট থানাতেও জানানো হয় ঘটনাটি। আগেও আমরা এই একই পদ্ধতিতে কাজ করতাম। কিন্তু অ্যাপটার মাধ্যমে সেই ঘটনাগুলো ভার্চুয়ালি একটা জায়গায় নথিভুক্ত হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা যে কাজটা করছি, সেটা স্বচ্ছভাবে সাধারণ মানুষ দেখতে পাবেন।”
আরও পড়ুন
মহামারীতে অভিভাবকহীন ৪৩ হাজার মার্কিন শিশু
পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য, জেলা, ব্লক এবং পুরসভাভিত্তিক— বিভিন্ন স্তরে ভাগ রয়েছে পৃথক পৃথক শিশু সুরক্ষা কমিটি। এবার অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এই পুরো পরিকাঠামোটাকে আনা গেল একটি ছাতার তলায়। ফলে এই ধরনের অপরাধের মনিটরিং করা আরও সহজ হয়ে উঠবে প্রশাসনের কাছে। সেইসঙ্গে অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ অভিযোগ দায়ের করতে পারায়, আর দ্রুত ঘটনাগুলি নজরে আসবে প্রশাসনের। নির্যাতনের হাত থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে আরও বেশি সংখ্যক শিশুকে, এ-বিষয়ে যথেষ্টই আশাবাদী প্রশাসন। রাজ্যের শিশু সুরক্ষা মন্ত্রকের এই উদ্যোগ এক কথায় অনন্যই বটে…
Powered by Froala Editor