২০১৪ সালের নালসা রায় এবং ২০১৯ সালের ট্রান্সজেন্ডার আইন অনুযায়ী, গড়ে উঠল ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ট্রান্সজেন্ডার পার্সনস বা ট্রান্সজেন্ডার জাতীয় পরিষদ। শনিবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এই পরিষদ গঠনের কথা জানানো হয়েছে। অথচ এতে খুশি হতে পারছেন না তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে লিঙ্গসাম্য আন্দোলনের দীর্ঘ লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা অভিযোগ তুলছেন, কেন এই পরিষদে পশ্চিমবঙ্গ থেকে একজন সদস্যও নেই? তাহলে কি এর মধ্যে আছে কোনো রাজনৈতিক সমীকরণ?
এইসব প্রশ্নের পাশাপাশি আক্ষেপের সুরে কেউ কেউ বলছেন, বাংলার এতদিনের লড়াইয়ের মর্যাদা দিল না কেন্দ্র।
যদিও কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন দপ্তরের পক্ষ থেকে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে একে একে সদস্য ‘রোটেশন’ করা হবে। আর তখন পশ্চিমবঙ্গের সদস্যদেরও সুযোগ আসবে। অর্থাৎ, এখন নয়। পরে কোনোদিন। কিন্তু নালসা রায় এবং ট্রান্সজেন্ডার বিল, দুই জায়গাতেই পরিষদের গঠনে রাজ্যের প্রতিনিধিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বলা হয়েছে। সেখানে এত বড় একটা দেশ থেকে কেন মাত্র ৫টি রাজ্যের প্রতিনিধিদের বেছে নেওয়া হল? আর সেখানেও তো পশ্চিমবঙ্গের অগ্রাধিকার পাওয়ার বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকতে পারে না। এদেশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকারের আন্দোলনের সূত্রপাত তো পশ্চিমবঙ্গেই।
ভারতের প্রথম রূপান্তরকামী নেটওয়ার্ক সংগঠন তৈরি হয় পশ্চিমবঙ্গেই। রাজ্যের ট্রান্সজেন্ডার উন্নয়ন বোর্ডের প্রাক্তন সদস্যা তথা সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিংহের সারা জীবনের লড়াইয়ের কথাও তো সকলের জানা। এই বিষয়ে তিনিও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে রঞ্জিতা সিংহ লিখেছেন “যেখানে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের রূপান্তরকামী আন্দোলনের নেতৃত্বে থেকেছে শুরু থেকে সেখানে বিহার, ওড়িশা, উঃ পূর্ব ভারত থেকে প্রতিনিধিদের জায়গা দেওয়া হল দেশের রূপান্তরকামী নাগরিকদের জন্য এই সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটিতে, বাদ গেল পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গে তথা ভারতের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার নেটওয়ার্ক ATHB-র তরফ থেকে আমরা এই কেন্দ্রীয় বঞ্চনাকে ধিক্কার জানাই।”। আর এদেশে প্রথম রূপান্তরকামী বিবাহের ঘটনাও তো ঘটে এ-রাজ্যেই। তিস্তা দাস ও দীপন চক্রবর্তীর বিবাহের খবর দেশবিদেশের নানা সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তারপরেও পরিষদের প্রথম সদস্যদের মধ্যে নেই এ-রাজ্যের কেউ। রাজ্য সরকারের সদস্য যেমন নেই, তেমনই কোনো অসরকারি সংগঠনের কর্মীও নেই। এই বঞ্চনার পিছনের কারণ কি শুধুই রাজনৈতিক। অনেকে অবশ্য মনে করছেন কেন্দ্রীয় শাসকদলের ঘনিষ্টরা ছাড়া কেউই স্থান পাননি পরিষদে।
আরও পড়ুন
বিখ্যাত মার্কিন পত্রিকার পাতায় ট্রান্সজেন্ডার মডেল, তৈরি হল ইতিহাস
তবে বাংলার সঙ্গে বঞ্চনার ইতিহাস এই প্রথম নয়। বর্তমান সরকারের মন্ত্রীসভায় কিছু বাঙালি সাংসদ উপমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পেলেও পূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব পাননি কেউই। আর এক্ষেত্রেও জম্মু-কাশ্মীর, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, ত্রিপুরা এবং গুজরাটের সদস্যরা স্থান পেলেন ট্রান্সজেন্ডার পরিষদে। নেই পশ্চিমবঙ্গ। তাই এই বঞ্চনাকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক বলতে নারাজ অনেকেই। বরং তাঁদের মতে সার্বিকভাবেই বাংলাকে দূরে রাখা হচ্ছে। অথচ এদেশের ইতিহাসে বাঙালিদের অবদান তো কোনো অংশে কম নয়। এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে কি সরব হবেন আপামর বাঙালি? নাকি সেখানেও রাজনৈতিক সমীকরণ আমাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখবে?
আরও পড়ুন
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নার্স হোচিমিন, বাংলাদেশের ট্রান্সজেন্ডার আন্দোলনের অন্যতম মুখও তিনিই
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রান্তকথা ও এটিএইচবি-র যৌথ উদ্যোগে শহরে পথ চলা শুরু প্রথম ট্রান্সজেন্ডার ক্লিনিক ‘অন্তর’-এর