‘আমাদের জীবন ও জীবিকার মধ্যে একটা সামঞ্জস্য স্থাপন করতে হবে। জীবনের বিনিময়ে জীবিকা? কখনো নয়। আবার লকডাউনে কাজ হারানো মানুষগুলোর দিন চলবে কীভাবে?’
বলছিলেন হোসে ডমিনিক। কেরলের পর্যটনশিল্পের এক কিংবদন্তি। আজ, ৫ আগস্ট, ভারতের হোটেল ও পর্যটনশিল্প তালুকের তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্বরা জড়ো হয়েছিলেন একটি ওয়েবিনারে। ওয়েবিনারটির আয়োজক, মাকাউট সেন্টার ফর কোলাবরেটিভ প্রোগ্রামস, ট্রেনিং আ্যন্ড রিসার্চ, এবং ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট। অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করলেন মাকাউটের উপাচার্য প্রফেসর সৈকত মৈত্র। ওয়েবিনারের বিষয়টিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ - নয়া বাস্তবতায় স্থায়ী পর্যটনশিল্প। অতিমারীর মধ্যে মুখ খুবড়ে পড়েছে পর্যটনশিল্প, তা বলাই বাহুল্য। উপরি উপরি লকডাউনে ক্ষতি হয়েছে বহু রিসর্টের। তালা পড়েছে, হোটেল-রেস্তোরাঁয়। এই ভয়ানক ভাইরাস যে কবে যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিজ্ঞানীরাও। এবং এই অপ্রত্যাশিত নিও নর্মালে এই শিল্পতালুকের টিকে থাকাও অনিশ্চিত। প্রকৃতির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাই তো পর্যটন দপ্তরের কর্তব্য। পরিবেশবান্ধব শিল্প এখন সময়ের দাবি। কিন্তু সমস্ত হিসেব নিকেশ তছনছ করে দিয়েছে, এই অতিমারী। বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে অস্তিত্বের সংকট। এমত পরিস্থিতিতে কীভাবে টিকবে পরিবেশ বান্ধব পর্যটন দপ্তর? কীভাবে অতিক্রম করা যেতে পারে অর্থনৈতিক মন্দা? সেই প্রশ্নগুলোই মূলত ধ্বনিত হচ্ছিল মাকাউটের উপাচার্য অধ্যাপক সৈকত মিত্র এবং আই আই এইচ এমের প্রতিষ্ঠাতা, ড: সুবর্ণ বসুর কণ্ঠে…
সেসব প্রশ্নের উত্তর রাখতে রাখতে যাচ্ছিলেন বক্তারা। হোসে ডমিনিক বলছিলেন, কীভাবে সময়ের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে আতিথেয়তা দপ্তরকে। উদাহরণ হিসেবে রেখেছিলেন কেরলের ট্যুরিজম বুমকে। ১৯৭৮ সালেও কেরল সরকার পর্যটনকে নিচু নজরেই দেখত। কিন্তু ধীরে ধীরে তারা বুঝতে শুরু করে এই দপ্তরের গুরুত্ব। বর্তমান বাস্তবতায় টিকে থাকতে গেলে হোটেলগুলিকে জোর দিতে হবে পরিচ্ছন্নতা, এবং পরিবেশবান্ধবতার দিকে। নিয়ম করে কর্মী এবং অতিথিদের করাতে হবে কোভিড টেস্ট...
‘হোটেল কর্মীরদের ডিজিটালি আরো স্বচ্ছন্দ হতে হবে,’ বলছিলেন আতিথেয়তা জগতের আরো এক কিংবদন্তি দেবাশিস দত্ত। বদলে ফেলতে হবে গোটা মডেলটাই। এই দপ্তরের অর্থনৈতিক ভাবে আরো টেকসই হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, বলে মনে করছেন তিনি। প্রয়োজন রয়েছে আঞ্চলিক মানুষজনদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সংযোগের।
সঞ্চয়ী হতে হবে, জানালেন ড: নীতা চৌধুরী। ফেলে দেওয়া জলের বোতল পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে ব্যয় সংকোচন করা যায়, প্রভৃতি নানা উপায় বাতলালেন তিনি। বর্তমানে পর্যটন ধীরে আন্তর্জাতিক থেকে সরে গিয়ে দেশের মধ্যেই মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, জানালেন মল্লিকা সেন। দরকার দেশীয় সংস্কৃতিকে আরো বেশি করে সামনে আনার...
আলোচনাসভা শেষ হল আশায় বুক বেঁধে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মন্ত্রে একমত সকলেই। এভাবেই হয়তো ঘুরে দাঁড়াবে পর্যটন দপ্তর, সেই আশাতেই শেষ হল ওয়েবিনার।
Powered by Froala Editor