চকোলেট খেতে কে-ই না ভালবাসে! কোনো বিশেষ দিনের দরকার পড়ে না, দোকান থেকে টুক করে কিনে নিলেই হল। যারা ভালবাসে, তাঁদের কাছে এ এক স্বর্গীয় সুখ। কিন্তু ক্রমাগত বেড়ে চলা বৃক্ষচ্ছেদনে সেই চকোলেটেরই ভবিষ্যৎ বিপদের দিকে যাচ্ছে। যদি বাঁচাতে হয়, তাহলে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে।
একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষার রিপোর্টে এমন পরিস্থিতির কথাই উঠে এসেছে। চকোলেট মূলত তৈরি হয় কোকো গাছের বীজ থেকে। যত দিন যাচ্ছে, ততই চকোলেটের চাহিদা বাড়ছে। সেটা স্বাভাবিকও বটে। অন্তত চকোলেট প্রেমীদের কাছে তো বটেই। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনও বাড়াতে হচ্ছে কৃষক ও জমির মালিকদের। এর জন্য আশেপাশের বন কেটে ফাঁকা জমি তৈরি করছেন তাঁরা। এতে হয়তো উৎপাদন বাড়ছে; কিন্তু পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপকভাবে! আর এই কথাটা তাঁদের কাছে পৌঁছচ্ছে না।
আরও পড়ুন
বন আর ফসল একসঙ্গে বাড়ুক—মূলনিবাসী মানুষদের দেখানো পথেই পরিবেশ রক্ষার চেষ্টা বিশ্বজুড়ে
রিপোর্টে উঠে এসেছে আরও একটি প্রসঙ্গ। কৃষকরা রীতিমত বাধ্য হচ্ছেন বন সাফ করে জমি বাড়াতে। কারণ, দারিদ্র্য। ঘানা, আইভরি কোস্ট-সহ আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে ও অন্যান্য জায়গাতেও কোকো গাছের চাষ হয়। যাঁরা চাষ করেন, তাঁদের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন। খুব বেশি অর্থ থাকে না তাঁদের কাছে। জমির পরিমাণ না বাড়িয়ে যাতে ওই জমিকেই আরও ফলনশীল, উর্বর করা যায়, সেই চেষ্টা ইচ্ছা থাকলেও করতে পারেন না। তার জন্য টাকার প্রয়োজন অনেক। উন্নত বীজ, কৃষি পদ্ধতি তাই এখানে ব্রাত্য থেকে যায়। কিন্তু চাহিদা তো থেমে নেই। অগত্যা, অরণ্য নিধন…
একটু খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এই ছবি আরও অনেক জায়গার। শুধুমাত্র দারিদ্র্যের জন্য কৃষিকাজের উন্নতি হচ্ছে না। এভহারাও রয়েছে আরও অনেক ক্ষেত্র। আজকে যদি কোকো চাষিদের অবস্থার উন্নতি না হয়, সেখানে কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি না হয়, তাহলে এই বন ধ্বংস চলতেই থাকবে। নিরুপায় তাঁরাও। এদিকে আমাদেরও চকোলেট চাই। সর্বোপরি, অবস্থার উন্নতি না হলে এভাবেই জঙ্গল ধ্বংস হবে; বিপন্নতার দিকে এগোবে পরিবেশও।