ষষ্ঠ গণ-অবলুপ্তির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। সম্প্রতি এমনটাই জানালেন সুইডিস মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি-র গবেষকরা। কিন্তু তাতে আর নতুন কী? বিগত দু’বছরে একাধিক গবেষণাই তো জানিয়েছে এই কথা। তবে? এতদিন পর্যন্ত প্রজাতি অবলুপ্ত হওয়ার হার দিয়েই গণ-অবলুপ্তির (Mass Extinction) সম্ভাবনাকে বিচার করতেন গবেষকরা। এবার সুইডেনের গবেষকরা তুলে আনলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি আঙ্গিক। মিলিয়ে দিলেন পূর্ববর্তী গণ-অবলুপ্তিগুলির সঙ্গে বর্তমান বিশ্বের পরিস্থিতিকে।
বিষয়টা ঠিক কেমন? সুইডিস গবেষকরা এক্ষেত্রে প্রমাণ হিসাবে হাজির করেছেন জলজ শৈবাল এবং অণুজীবদের। আদতে, এইসব অ্যালগি এবং ব্যাকটেরিয়াই যে কোনো জলাশয়ের প্রাকৃতিক ভারসাম্যের রক্ষাকর্তা। তাদের অনুপস্থিতি যেমন জলাশয়ের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, ঠিক তেমনই অতিরিক্ত উপস্থিতির ফলাফলও হয়ে উঠতে পারে ভয়াবহ।
সুইডিস গবেষকরা দেখাচ্ছেন, অধিকতর অণুজীবের উপস্থিতি বিষিয়ে তোলে যেকোনো জলাশয়কে। যার ফলে ক্রমশ মারা যেতে থাকে জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণীরা। তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে স্থলভূমিতেও। আর সেটাই হয়ে চলেছে বর্তমান সময়ে। সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর সমস্ত জলাশয়গুলিতেই লাফিয়ে বাড়ছে অণুজীবের সংখ্যা।
আজ থেকে ২৫ কোটি বছর আগে সর্বশেষ গণ-অবলুপ্তির সময়েও দেখা গিয়েছিল এই একই ঘটনা। অস্তিত্ব মুছে গিয়েছিল পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ প্রজাতির। যা পরিচিত ‘গ্রেট ডাইং’ (Great Dying) নামে। সেইসময়কার একাধিক জীবাশ্মে তা প্রমাণিত স্পষ্টভাবে।
আরও পড়ুন
বিপন্নপ্রায় প্রাণীদের অবলুপ্তি ঠেকাতে গণ-ভ্যাকসিনেশনের পথে বিজ্ঞানীরা
তবে সেদিনের সেই ঘটনা আর আজকের অবস্থা সামান্য হলেও পৃথক। সেসময় আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বেড়ে গিয়েছিল কার্বন ও অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাসের মাত্রা। জলেও মিশেছিল আগ্নেয় লাভাজাত নানা ক্ষতিকর রাসায়নিক। যা পারতপক্ষে জলজ অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। তবে আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকৃতি নয় বরং মানুষের কার্যকলাপই বাড়িয়ে তুলছে কার্বন নির্গমনের মাত্রাকে। বায়ুদূষণ এবং জলদূষণের বিরুদ্ধেও নেওয়া হচ্ছে না কোনোরকম ব্যবস্থা। যা পারতপক্ষে দ্রুত বংশবিস্তারের সহায়ক হয়ে উঠেছে অণুজীবদের কাছে।
আরও পড়ুন
ইতিহাসে এই প্রথম, জিন ক্লোনিং-এ জন্ম নিল অবলুপ্তপ্রায় ব্ল্যাক ফুটেড ফেরেট
গবেষকদের অনুমান, এখন থেকেই ‘গ্রেট ডাইং’-এর প্রভাব দেখা দিতে শুরু করেছে পৃথিবীর বুকে। তার অন্যতম উদাহরণ হল করোনাভাইরাস। পরবর্তীতে আরও বাড়তে থাকবে অণুজীব-জনিত মহামারীর ভয়াবহতা। নতুন করে হানা দেবে নানান অজানা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক। ২১০০ সাল নাগাদ সেই সংকট পৌঁছবে চরমে।
আরও পড়ুন
শব্দ নয়, শিস দিয়েই ভাব বিনিময় করেন তাঁরা; অবলুপ্তির পথে তুরস্কের ‘পাখি ভাষা’
আর প্রতিকার? এই প্রশ্নে এসে ফিরতে হবে সেই একই জায়গায়। উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে জলবায়ু পরিবর্তন এবং দূষণের বিরুদ্ধে। কমিয়ে আনতে হবে বায়ুতে কার্বনের পরিমাণ। তাতে অবশ্য বদলে যাবে না পরিণতি। কিন্তু খানিকটা হলেও গতি কমানো যাবে গণ-অবলুপ্তির। কিন্তু সেটুকু পদক্ষেপ নিতেও কি আদৌ কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রনেতারা?
Powered by Froala Editor