সারা পৃথিবীজুড়েই এখন অন্যতম আলোচিত বিষয় মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের পরিকাঠামো। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে উত্তোরত্তর বেড়েই চলেছে ইংরেজি ভাষায় পঠনপাঠনের প্রবণতা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের ইউনাইটেড ডিস্ট্রিক্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম অফ এডুকেশন সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্টেও উঠে এল সেই একই তথ্য। তবে এর মধ্যেও সারা দেশে ছবিটা একইরকম নয়। বিশেষ করে ব্যতিক্রম হিসাবে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের পরিসংখ্যান। সারা দেশের মধ্যে বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষায় মাতৃভাষায় পঠনপাঠনে সবচেয়ে এগিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গই।
ইউডিআইএসই-র পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিমবঙ্গে স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে ৮৯.৯ শতাংশই পড়াশোনা করে বাংলা মাধ্যমে। বাকিদের মধ্যেও অন্তত ৫ শতাংশের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাংলাতেই। মাত্র ৫.৩ শতাংশ পড়ুয়া প্রথম থেকেই ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে। তবে ক্রমশ পশ্চিমবঙ্গেও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের চাহিদা বাড়ছে। এই বিষয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়েছে রিপোর্টে। শুধুই পশ্চিমবঙ্গ নয়, বাংলা মাধ্যম স্কুলের বাড়বাড়ন্ত প্রতিবেশি রাজ্য ওড়িশাতেও। সেখানে মোট জনসংখ্যার মাত্র ১.২ শতাংশ বাংলাভাষী। অথচ স্কুলপড়ুয়াদের ৮০ শতাংশই পড়াশোনা করে বাংলা মাধ্যমে। ইংরেজি নয়, বাংলাই এখানে আধিপত্যের ভাষা।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের চাহিদা বাড়ছে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতেও। তবে এর মধ্যেও যথেষ্ট নিরাপদ অবস্থায় রয়েছে কর্ণাটক। যদিও গত ৪ বছরে কর্ণাটকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। তবুও ৫৩.৫ শতাংশ পড়ুয়াই এখনও কন্নড় ভাষায় পড়াশোনা করে। তবে অন্যান্য রাজ্যে যথেষ্ট থাবা বসিয়েছে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলি। তেলেঙ্গানা বা অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যে জাতিচেতনার যথেষ্ট প্রভাব থাকা সত্ত্বেও সেখানে ৭৩.৮ শতাংশ পড়ুয়াই পড়াশোনা করে ইংরেজি মাধ্যমে। তামিলনাড়ুতেও মাত্র ৪২.৬ শতাংশ পড়ুয়া তামিল ভাষায় শিক্ষালাভ করে। কেরালাতেও মালয়ালম ভাষার পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৫ শতাংশের কম।
ভারতে ঔপনিবেশিকতার শুরু বাংলা থেকেই। এমনকি ইংরেজি শিক্ষার শুরুও কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করেই। তবুও বাংলা ভাষার টান ছিঁড়ে ফেলতে পারেনি বাঙালি। আর এই ভাষা-আগ্রাসনের যুগে দাঁড়িয়েও তাই এমন একটা পরিসংখ্যান যথেষ্ট আশার আলো দেখায়।
আরও পড়ুন
চিত্রপ্রদর্শনীর হাত ধরে লকডাউনেও ‘স্বপ্ন’ দেখাচ্ছেন বাংলার তরুণরা
Powered by Froala Editor