আজ থেকে ঠিক ১৬৫ বছর আগে এক যুগসন্ধিক্ষণের সাক্ষী ছিল কলকাতা শহর। উত্তর কলকাতার ঝামাপুকুর এলাকায় রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল শহরের প্রথম বিধবা বিবাহ। বর্ধমানের পাত্রী ১০ বছরের বাল্যবিধবা কালীমতির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন সংস্কৃত কলেজের ছাত্র শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন। বিধবাবিবাহের সেই ইতিহাস আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু অবহেলায় ধুঁকছে ইতিহাসের সাক্ষী সেই বাড়িটি। এবার রাজ্য হেরিটেজ কমিশন উদ্যোগ নিয়েছে বাড়িটিকে শহরের ঐতিহ্যশালী অট্টালিকাগুলির (Heritage Buildings) তালিকায় নথিভুক্ত করার। শুধু এই বাড়িটিই নয়, শহরের ইতিহাসের সাক্ষী এমন অনেক বাড়িকেই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে হেরিটেজ তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন (Heritage Commission)।
২০০১ সালে বিধানসভায় নতুন আইন পাশ করে তৈরি হয় পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন। তবে তার কাজে সবচেয়ে বেশি গতি আসে ২০০৫ সালের পর। সেই বছর কমিশনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন কিংবদন্তি অধ্যাপক প্রতাপচন্দ্র চন্দ্র। শহরের এবং শহরের বাইরেও ইতিহাস খুঁজে অবহেলায় অযত্নে পড়ে থাকা বাড়িগুলিকে হেরিটেজ তালিকায় নিয়ে এসেছিলেন তিনি। তবে তাঁর পর আবার ঝিমিয়ে পড়েছিল কমিশনের কাজ। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে কমিশন নিজের উদ্যোগে খুব কম বাড়িই তালিকাভুক্ত করেছে। কেবলমাত্র বাড়ির বর্তমান মালিকদের থেকে অনুরোধ এলে তবে সেই বাড়ি তালিকাভুক্ত করার কথা ভাবা হয়েছে। তবে যেহেতু হেরিটেজ তকমা পাওয়া বাড়ি অন্য কোনো নির্মাণ প্রকল্পের কারণে বিক্রি করা যায় না, তাই বর্তমান মালিকরাও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনাগ্রহ দেখিয়ে থাকেন। এই পরিস্থিতিতে ঐতিহ্য এবং ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে আবার কমিশনকেই উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের বর্তমান চেয়ার পার্সন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন।
শুভাপ্রসন্ন আরও জানিয়েছেন, প্রতাপচন্দ্রের সময় কমিশন শহরের মোট ৫৫৩টি অট্টালিকাকে হেরিটেজ তালিকাভুক্ত করেছিল। সেই তালিকাকেই আরও একবার বাড়িয়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে কমিশন। বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের প্রশ্নে বর্তমান মালিকদের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করা হবে না, সে-কথাও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। বরং এইসমস্ত ক্ষেত্রে কমিশনই উদ্যোগ নেবে। তবে হেরিটেজ আইন সংক্রান্ত নিয়মাবলী মেনে চলতেই হবে। আগামী কয়েকমাস ধরে চলবে সেই তালিকা প্রস্তুতির কাজ। অবশ্য এবারে ঠিক কতগুলি বাড়ি বা স্থাপত্যকে তালিকাভুক্ত করা হবে, তা এখনই স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। ইতিহাস রক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে শহরের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সমস্ত মানুষ কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন বলেও আশা জানিয়েছেন শুভাপ্রসন্ন।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
রোবটিক্সের মাধ্যমে পুতুল নাচ, ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বাঁচাতে উদ্যোগ ইঞ্জিনিয়ারের