পেরিয়ে গেছে এক বছরেরও বেশি সময়। শুধু হয়েছে গণ-টিকাকরণ। কিন্তু পাল্লা দিয়ে এখনও প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা। তবে অনেকটাই গতি কমেছে সংক্রমণের। গণ-ভ্যাকসিনেশনই যে অদূর ভবিষ্যতে সাফল্য এনে দেবে মহামারীর বিরুদ্ধে, এমনটাই বিশ্বাস বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি জানতে পারবে এই ভাইরাস-যুদ্ধের কথা? এবার সেই উদ্যোগেই এগিয়ে এল ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল মেডিসিন লাইব্রেরি। সেখানেই ডিজিটাল সংগ্রহশালা তৈরি করছেন আর্কাইভিস্টরা।
বিশ্বব্যাপী ৯০০০ সূত্র থেকে সংগ্রহ করা প্রায় ৩ কোটি নথি সংরক্ষিত হবে এই ডিজিটাল রিপোসিটরিতে। থাকছে বিভিন্ন পডকাস্ট, ফটোগ্রাফ, ভিডিও, স্বাস্থ্য নথি, বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট, উল্লেখযোগ্য সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট— সবকিছুই। সেখানে যেমন স্বাস্থ্যকর্মীদের বীরত্বের প্রতিচ্ছবি দেখানো হবে, তেমনই ধরা থাকবে সভ্যতার ঐতিহাসিকও ভুলগুলিও, যা ত্বরান্বিত করেছিল মহামারীকে। উদ্দেশ্য, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিক্ষা নিতে পারে এই মহামারীর ইতিহাস থেকে।
তবে এর আগেও সাম্প্রতিক সময়ে সোয়াইন ফ্লু, সার্স, ইবোলা, জিকা প্রভৃতি নোভেল ভাইরাসের জন্য তৈরি হয়েছে মহামারী। কিন্তু তা থেকে কি বিন্দুমাত্র শিক্ষা লাভ করতে পেরেছি আমরা? ইবোলার মতো ভয়ঙ্কর অতিমারীকেও প্রতিহত করেছিল আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলি। আর সেখানে দাঁড়িয়ে অর্থনীতিতে এগিয়ে থাকা রাষ্ট্রগুলিরই ভুল সিদ্ধান্ত বাড়িয়ে তুলেছিল সঙ্কট। সেই তথ্যও ধরা থাকছে এই লাইব্রেরিতে।
সংরক্ষকদের মতে, ট্রাম্পের ক্লোরোক্যুইন হোক কিংবা বলসোনারোর ‘সামান্য ফ্লু’— সবটাই ছিল এই স্বাস্থ্যসংকটের রাজনীতিকরণ। অন্যদিকে মহামারীর একদম শুরুতেই চিনের তথ্য গোপন কিংবা ব্রিটেনে লকডাউন আরোপে বিলম্ব হওয়ার মাশুল গুনতে হচ্ছে আজও। তবে শুধুই যে রাজনৈতিক নেতাদের ভুল সিদ্ধান্ত তেমনটাও নয়। দায়ী সাধারণ মানুষও। মাস্ক ব্যবহারে অনীহা, দূরত্ববিধি না মেনে চলাও তো মহামারীর এই ব্যাপকতার অন্যতম কারণ।
উদাহরণ হিসাবে এক শতক আগের নথি তুলে এনেছেন সংরক্ষকরা। ১৯১৮ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীতে মারা গিয়েছিলেন ৫-১০ কোটি মানুষ। সেইসময়েও মাস্ক না পরার একইরকম প্রবণতা দেখা দিয়েছিল সাধারণের মধ্যে। তৈরি হয়েছিল ‘নো-মাস্ক লিগ’। মার্কিন প্রদেশে মাস্কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা ব্রাজিলে কার্নিভাল না হওয়ায় সাধারণ মানুষের পথযাত্রা যেন হুবহু মিলে যায় শতাব্দীপ্রাচীন সেই নথির সঙ্গে।
কাজেই চলতি মহামারীর সম্পর্ক এই সংগ্রহশালা যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কতটা সচেতন করতে পারবে, তা নিয়ে থেকেই যাচ্ছে সন্দেহ। কিন্তু আশার আলো জ্বালিয়ে রাখছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপানের মতো দেশের তৎপরতা, জরুরী পরিকাঠামো এবং সর্বোপরি সাধারণ মানুষের শৃঙ্খলা। সবকিছুরই উদাহরণ তুলে রাখছেন সংগ্রাহকরা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মই ঠিক করবে আগামীদিনে এমন পরিস্থিতি পুনরায় ফিরে এলে ঠিক কোনটাকে বেছে নেবে তারা…
Powered by Froala Editor