সবেমাত্র শেষ হয়েছে পলাশির যুদ্ধ। সিরাজদৌল্লাকে পরাজিত করে বাংলা-বিহার-ওড়িশা জয়ের স্বপ্ন পূরণ করে ফেলেছে ব্রিটিশরা। সেইসঙ্গে গোটা ভারতেই ইউনিয়ন জ্যাক ওড়ানোর পথে অনেকটা এগোল তারা। সেই সময় ব্রিটিশদের সঙ্গে আরও একটি শক্তি এই একই স্বপ্ন দেখছে - ফরাসিরা। ফলে তাদের সঙ্গে ব্রিটিশদের টক্কর অবশ্যম্ভাবী ছিল। অবশেষে সেটি শুরুও হল। ২২ জানুয়ারি, ১৭৬০ সালে দক্ষিণ ভারতে মুখোমুখি হয় এই দুই বিদেশি শক্তি। শুরু হয় ওয়ান্ডিওয়াশের যুদ্ধ, বা তৃতীয় কারনাটিক যুদ্ধ।
অবশ্য সেই সময়ের পৃথিবীর দিকে তাকালে নানা জায়গায় এই ঔপনিবেশিক শক্তিদের মধ্যে যুদ্ধের নিদর্শন পাওয়া যাবে। সপ্তবর্ষ ব্যাপী যুদ্ধ এই সময়েরই ঘটনা। তারই একটা খণ্ডচিত্র দেখা গেল দক্ষিণ ভারতে। পলাশির যুদ্ধে জয়লাভের পরেই ব্রিটিশরা ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর দখল করল। আর এতেই ক্ষেপে গেল ফরাসিরা। তাঁদেরও ভারত দখল করার ইচ্ছা। জেনারেল কাউন্ট ডে’ লালির নেতৃত্বে ফরাসি সৈন্য, তামিলনাড়ুর ভান্ডাবাসি বা ওয়ান্ডিওয়াশ দুর্গ অধিকার করার জন্য আক্রমণ করে। ফরাসিদের সঙ্গে সেই যুদ্ধে হাত মিলিয়েছিল মারাঠারাও।
ব্রিটিশরাও থেমে থাকেনি। জেনারেল স্যার আয়ার কুটের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ফরাসিদের বিপক্ষে দাঁড়ায়। ২২ জানুয়ারি শুরু হয় ব্রিটিশ-ফরাসিদের এই যুদ্ধ। বলা ভালো, ভারত দখলের যুদ্ধ। কিন্তু ব্রিটিশদের থামানো যায়নি। ফরাসিরা তো হারতে থাকেই, উপরন্তু এক এক করে পন্ডিচেরি, মাহে-র মতো উপনিবেশগুলিও হাতছাড়া হতে থাকে। উপায়ান্তর না দেখে, ১৭৬৩ সালে প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয় এই যুদ্ধ। চুক্তি অনুযায়ী, চন্দননগর আর পন্ডিচেরি ফরাসিদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে এও বলা হয়, বাণিজ্য বিস্তার ছাড়া ভারতে আর কোনো কাজ করবে না ফ্রান্স।
ভারতের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ এই ওয়ান্ডিওয়াশের যুদ্ধ। এই যুদ্ধ ব্রিটিশদের ভারত শাসনের রাস্তা একপ্রকার পরিষ্কারই করে দেয়। ফ্রান্সকে পরাজিত করে নিজেদের অধিকার কায়েম করে তারা। বলতে গেলে, ভারতের ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিহাস এই সময় থেকেই শুরু।