চারিদিকে ধূসর ধুলোর আবরণ। ঠিক যেন মরুপ্রান্তর। কোনো প্রাণীর চিহ্নই নেই। নেই স্থায়ী জনবসতিও। আর তার মধ্যেই ছোটো ছোটো গোলাকার গর্ত। সেখানে নিশ্চিন্তে বেড়ে উঠছে সবুজ চারা গাছ। ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের লাঞ্জারোটে দ্বীপে গেলে দেখা যাবে এমনই দৃশ্য। প্রকৃতির প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে সেখানেই দিব্যি চলছে আঙুর চাষ। এক কথায় যা অবিশ্বাস্য।
স্পেনের নিকটবর্তী এই দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কৃত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগে। চলেছিল ঔপনিবেশিক রাজত্ব স্থাপনের প্রচেষ্টাও। মূলত এই অঞ্চলের উর্বর কৃষিজমিই ছিল ঔপনিবেশিক শাসকদের লোলুপতার কারণ। তবে আঠারো শতকে একেবারে অন্যদিকে বাঁক নেয় ইতিহাস। আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের ফলে আগ্নেয় পাথর এবং ধূসর ছাই-তে ঢেকে যায় গোটা দ্বীপটি। জনশূন্য হয়ে পড়ে লাঞ্জারোটে।
পরিস্থিতি খানিকটা স্থিতিশীল হতে শুরু হয় মানুষের অভিযান। না, তারপর আর পুনরায় জনবসতি গড়ে ওঠেনি সেভাবে। তবে স্থানীয়রা আবিষ্কার করেন, আগ্নেয় ছাইমিশ্রিত মাটিতে রয়েছে বেশ কিছু খনিজ পদার্থ। যা বিশেষ কিছু কিছু ফসল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ফলত নতুন করে শুরু হয় চাষাবাদ। প্রাথমিকভাবে কৃষকরা বেছে নেন আঙুরকেই।
তবে সমস্যা দেখা দেয় অন্য জায়গায়। মাটিতে গাছের জন্য পুষ্টি পাওয়া গেলেও অভাব জলের। বৃষ্টিপাত সেভাবে হয় না বললেই চলে। চড়াই-উৎরাই জমিতে সুযোগ নেই সেচেরও। সমাধান খুঁজতে ধূসর ছাই সরিয়ে গর্ত তৈরি করেন কৃষকরা। তারপর সেখানে বৃক্ষরোপণ। হ্যাঁ, আগ্নুৎপাতের আগে মাটির তলায় জমে থাকা ভূগর্ভস্থ জলেই সমাধান হয় সমস্যার। বিগত প্রায় দুই শতক ধরে এভাবেই আঙুরের চাষ হচ্ছে ক্যানারির এই দ্বীপে।
মূলত এই আঙুর ব্যবহৃত হয় ওয়াইন তৈরিতেই। স্পেন তো বটেই, ইউরোপজুড়েও বেশ ভালোই খ্যাতি রয়েছে ক্যানারি ওয়াইনের। মাঝেমধ্যে তার রপ্তানি হয় আমেরিকা কিংবা অস্ট্রেলিয়াতেও।
তবে বর্তমানে একেবারে যে জনশূন্য এই অঞ্চল, তেমনটা নয়। কৃষক ছাড়াও, এই অভিনব দৃশ্য দেখতে প্রতিবছর ভিড় জমান পর্যটকরা। স্থায়ী থাকার ব্যবস্থা না থাকায় অবশ্য তাঁদের ফিরে যেতে হয় পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। ভাইন-ইয়ার্ড ছাড়াও লাঞ্জারাটেতে রয়েছে প্রায় ৩০০ সুপ্ত এবং সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। তাও একটি বড়ো আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে। কী ভাবছেন আপনিও একবার ঢুঁ মেরে আসবেন নাকি ইউরোপের এই দ্বীপপুঞ্জে? জীবন যে অভিযোজনের মধ্যে দিয়ে নিজের পথ বেছে নেয়, তা দেখে যে বিস্মিত হবেন সেকথা বলতে পারি হলফ করেই…
আরও পড়ুন
নেতাজির দুটি আগ্নেয়াস্ত্রকে নতুন করে লাইসেন্স দিতে চলেছে কলকাতা পৌরসভা
Powered by Froala Editor