সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন তো সবাইকেই চলে যেতে হবে। তবু যদি মৃত্যুর পরেও কোনোভাবে এই পৃথিবীর বুকে থেকে যাওয়া যেত - এমন আকাঙ্খা তো আমাদের অনেকেরই। সেই আকাঙ্খা থেকেই মিশরীয়রা তৈরি করেছিলেন পিরামিড। সেখানে মাটির নীচে মৃতদেহকে অবিকৃত অবস্থায় রেখে দেওয়া হত। মনে করা হত, মৃত্যুর পরেও জীবন আছে। সেই দেশেরই মানুষ নেছায়মুন। খ্রিস্টপূর্ব ১০৯৯ থেকে ১০৬৯ পর্যন্ত থিবসের আমুন কানার্ক মন্দিরের পুরোহিত ছিলেন তিনি। ধর্মীয় কাজ পরিচালনার জন্য তাঁকে উচ্চস্বরে গান গাইতে হত। কিন্তু মৃত্যুর পরে তাঁর কণ্ঠ থেমে যায়। নেছায়মুন চেয়েছিলেন, মৃত্যুর পরেও যেন তিনি কথা বলে যেতে পারেন। সম্প্রতি তাঁর সেই ইচ্ছা পূরণ করলেন বিজ্ঞানীরা।
রয়্যাল হলোওয়ে, ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন, ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্ক এবং লিডস মিউজিয়ামের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৈরি একটি দল তিন হাজার বছর পর নেছায়মুনের মমির কণ্ঠ থেকে স্বর বের করে আনতে সফল হয়েছেন। তাঁর কণ্ঠনালী ও ভোকাল কর্ডকে স্ক্যান করে ৩ডি প্রিন্টিং-এর সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম বাগযন্ত্র। আর সেখান থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিংএর সাহায্যে তাঁর কণ্ঠস্বর পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
মৃত মানুষের কণ্ঠস্বর উদ্ধারের প্রকল্প এর আগে আর হয়নি বলেই জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের প্রত্নবিদ্যার অধ্যাপক জোয়ান ফ্লেচার। অপর একজন অধ্যাপক জন স্কোফিল্ড জানিয়েছেন, নেছায়মুনের কফিনের উপর তাঁর ইচ্ছার কথা লেখা আছে। তিনি মৃত্যুর পরেও কথা বলতে চেয়েছিলেন। এখনও অবধি যদিও তাঁর কণ্ঠ থেকে কেবল একটি স্বরবর্ণ তৈরি করা গেছে, তবে খুব তাড়াতাড়ি যে একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য উচ্চারণ করানো যাবে, সে ব্যাপারে আশাবাদী অধ্যাপক স্কোফিল্ড।
তবে এই পদ্ধতির সাহায্যে মৃত মানুষের কণ্ঠস্বর পুনরুদ্ধার করতে গেলে তার কণ্ঠনালী সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় থাকা খুব জরুরি। তিন হাজার বছর আগে মিশরীয়রা মমি তৈরির অসাধারণ প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে পেরেছিল বলেই আজ এই বিরল গবেষণায় সাফল্য পেলেন বিজ্ঞানীরা।