বাঙালির পুজোর মরসুম শুরু হয়ে গেল। দুর্গাপুজোর তৃতীয়া, চতুর্থী থেকেই জনসমুদ্রে ভেসে গেছে মহানগর। নজরকাড়া থিম পুজোর মাঝে থাকছে সাবেকি পুজোও। কিন্তু যতই থিম বনাম সাবেকিয়ানার দ্বন্দ্ব চলুক, একটি পুজো এখনও এই সবকিছুর ঊর্ধ্বে। বেলুড় মঠের দুর্গাপূজা। মহাষ্টমী তো বটেই, পুজোর বাকি দিনগুলোতেও ভক্তদের ভিড় হয় দেখার মতো। সমস্ত শিল্প ছাড়িয়ে, এই একটা জায়গাতে সবাই আসেন প্রাণের টানে।
বেলুড় মঠের দুর্গাপুজোর ইতিহাস হয়ত কমবেশি সবারই জানা। তখন সদ্য শুরু হয়েছে মঠের যাত্রাপথ। সেখানে সবার ওপরে রয়েছেন স্বামী বিবেকানন্দ। একদিন নিজের ঘরের সামনের বেলগাছের তলায় বসেছিলেন স্বামীজি। নানা কথা ভাবতে ভাবতে, হঠাৎই মনে পড়ে দুর্গাপূজার কথা। তিনি ঠিক করলেন, বেলুড় মঠেও দুর্গাপূজা করা হবে। যেমন ভাবা, তেমনই কাজ। ১৯০১ সালে প্রথম এখানে শুরু হয় পুজো। কুমারটুলি থেকে প্রতিমা নিয়ে এসেছিলেন কৃষ্ণলাল মহারাজ। প্রাচীন বৈদিক মতে পুজো করা হবে বলে ঠিক হল। স্বামীজির সঙ্গে তাঁর শিষ্যরাও যুক্ত হন পুজোর কাজে। কিন্তু সংকল্প কার নামে করা হবে? সন্ন্যাসীরা তো পুজোর সংকল্প নিতে পারবেন না! স্বামীজিই উপায় বাতলে দিলেন। তখনও জীবিত ছিলেন সারদামণি দেবী। মা সারদার নামে তখন পুজোর সংকল্প করা হয়। এমনকি, তাঁকে আলাদা করে জ্যান্ত দুর্গা রূপে পুজোও করেন স্বামী বিবেকানন্দ।
কথায় কথায় এসে যাবে বেলুড় মঠের বিখ্যাত মহাষ্টমীর কুমারী পূজার কথা। একদম প্রথম পুজো থেকেই শুরু হয়েছিল প্রথাটি। প্রিয় রামলালদাদার মেয়েকেই প্রথম কুমারী রূপে বাছেন স্বামীজি। সেই থেকে শুরু হল বেলুড় মঠের কুমারী পূজা। আজও তা সমান নিষ্ঠায়, সমান আয়োজনে চলছে। দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন এখানে। শুধু অষ্টমীতে নয়, পুজোর প্রতিটা দিন শুদ্ধতায়, পবিত্রতায় ভরে থাকে বেলুড়।