“যাঁরা নাটকের অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা তো চাইলে এই সময় বিকল্প কোনো রাস্তা খুঁজে নিতে পারবেন। কিন্তু নাটকের নেপথ্যকর্মী যাঁরা, তাঁদের তো নাটক ছাড়া আর কিছুই করার নেই।” বলছিলেন নাট্যকর্মী তথা পরিচালক কমলেশ চক্রবর্তী। এই করোনা আবহে তাঁর উদ্যোগেই জোট বেঁধেছে কলকাতার তিনটি বড়ো নাটকের দল – পিপলস লিটল থিয়েটার, নিউ থিয়েটার্স গ্রুপ এবং দৃশ্যপট। উদ্দেশ্য একটাই। এই পরিস্থিতিতে দুঃস্থ শিল্পীদের কাছে কিছু অর্থসাহায্য পৌঁছে দেওয়া। আর এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই শুরু হয়েছে অনলাইন ভার্চুয়াল নাট্যোৎসব।
তিনটি দলের মোট ১৪টি নাটক নিয়ে এই উৎসব। করোনা আবহে যে সমস্ত দর্শক নাটকের মঞ্চাভিনয় দেখা থেকে বঞ্চিত, তাঁরাও ঘরে বসেই সেই স্বাদ পাবেন কিছুটা। নির্দিষ্ট সূচি অনুযায়ী ইউটিউব সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সম্প্রচারিত হচ্ছে সেই নাটকের শো। সেইসঙ্গে দর্শকরা ইচ্ছেমতো সাহায্য পাঠাতে পারবেন তহবিলে। ইতিমধ্যে সংগৃহীত অর্থ থেকে দুবার শিল্পীদের হাতে সাহায্যমূল্য তুলে দিতে পেরেছেন তাঁরা। “মানুষের সাহায্য পেয়ে আমরা সত্যিই আপ্লুত। শুধু বাংলার মানুষ নন, বাংলার বাইরেও দেশের নানা প্রান্ত থেকে, এমনকি পৃথিবীর নানা জায়গা থেকে সাহায্য পাঠিয়েছেন মানুষ।” বলছিলেন কমলেশবাবু। সেইসঙ্গে খাদ্যসামগ্রী ও অন্যান্য রেশনদ্রব্য নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে নব নালন্দা অ্যালুমনাই এ্যাসোসিয়েশন এবং হিউম্যানগ্রোভস সংস্থা।
ইতিমধ্যে ২৫ জুন এবং ২৫ জুলাই তারিখে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন-আর্টসের ফটকের সামনে সাহায্যমূল্য বিতরণের দুটি অনুষ্ঠান হয়ে গিয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেবশঙ্কর হালদার, সেঁজুতি মুখোপাধ্যায়, অসিত বসু, হর ভট্টাচার্য, উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, সীমা মুখোপাধ্যায়, অনির্বান ভট্টাচার্যের মতো শিল্পীরা। শুধুই নাট্যকর্মীদের নয়, পাশাপাশি এই করোনা অতিমারীর সঙ্গে লড়াই করতে থাকা ৪টি ভলেন্টিয়ার দলের হাতে পিপিই কিট, স্যানিটাইজার সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দিতে পেরেছেন তাঁরা। এছাড়াও কমলেশবাবু বলছিলেন, “আমরা মনে করি আমাদের নাটকের সময় যাঁরা চা দিয়ে যান, গিরিশ মঞ্চের পাশে যে দিদি চপ ভাজেন – তাঁরা সবাই নাটকের জগতের অংশ। এই অতিমারী তাঁদের সবার জীবনকে স্তব্ধ করে দিয়েছেন। তাই তাঁদের কাছেই যতটুকু সম্ভব সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমরা।”
আরও পড়ুন
১৪টি রাজ্যের নাটক নিয়ে জাতীয় উৎসব নৈহাটির ‘রঙ্গসেনা’র
নাটকের জগৎ তো এক মিলিত সাধনার জগৎ। কঠিন সময়েও সবাইকে হাতে হাত রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। এই অতিমারী পরিস্থিতিতে সেই বার্তাই দিচ্ছেন পিএলটি, এনটিজি এবং দৃশ্যপটের সদস্যরা। আর সেইসঙ্গে এই উৎসবের বড়ো পাওনা অবশ্যই বহুল আলোচিত ১৪টি নাটকের ডিজিটাল আর্কাইভ তৈরি হওয়া। যেখানে রয়েছে পিএলটি প্রযোজিত উৎপল দত্তের ‘কিরাতপর্ব’, এনটিজি-র ‘রং কাঠ আলো’ বা দৃশ্যপটের ‘চারু’-র মতো উল্লেখযোগ্য নাটকগুলিও। আপাতত ১১টি নাটকের সম্প্রচার হয়ে গিয়েছে। আর মাত্র ৩টি নাটকের পরেই শেষ হবে এই আয়োজন। কিন্তু অতিমারীর প্রকোপ মিটবে কি? কমলেশবাবু বলেন, “হয়তো আবারও মানুষের কাছেই হাত পাততে হবে আমাদের। মানুষের কাছে ভিক্ষা চাওয়া ছাড়া তো আমাদের আর কিছু করার নেই। দর্শকরাই পারেন নাটকের জগতকে বাঁচিয়ে রাখতে।”
আরও পড়ুন
‘বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর বদলেছিলাম পুরনো নাটকের সংলাপও’ : শাঁওলি মিত্র
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
নাটকের নামেই ‘ধর্মীয় ভাবাবেগে’ আঘাত! মধ্যপ্রদেশে বন্ধ হল নাট্যোৎসব