জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে অনেক প্রজাতিই। ঠিক তেমনই একটি পাখি রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ায়। তার নাম ক্যালিফোর্নিয়া কন্ডোর। দীর্ঘদিন ধরেই তাই এই পাখিটিকে নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা। আর সেই গবেষণার সূত্রেই উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেখা গিয়েছে, অন্তত দুটি ক্যালিফোর্নিয়া কন্ডোরের জন্ম হয়েছে যাদের কোনো পিতৃপরিচয় নেই। অর্থাৎ কোনো পুরুষের জননকোষ ছাড়াই জন্ম হয়েছে তাদের। এই প্রক্রিয়া মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ক্ষেত্রে খুবই বিরল। আর ক্যালিফোর্নিয়া কন্ডোরের ক্ষেত্রে তো কল্পনাই করেননি কেউ।
১৯৮২ সাল থেকে ক্যালিফোর্নিয়া কন্ডোরের সংরক্ষণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরীক্ষাগারে নিয়ন্ত্রিত প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের সংখ্যাও বাড়ানো হয়। ১৯৮২ সালে যেখানে মাত্র ২২টি পাখি বেঁচে ছিল, ২০১৯ সালে সংখ্যাটা ৫০০ পেরিয়ে যায়। কিন্তু এই সময়েই বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখতে যান, কোন কোন পাখিগুলির মধ্যে নিরাপদ প্রজনন সম্ভব। আর সেই পরীক্ষা করতে গিয়েই দুটি পাখির জিন দেখে অবাক তাঁরা। দেখা যায়, কোনো পুরুষ পাখির সঙ্গেই এদের জিনের মিল নেই। অর্থাৎ তাদের মাতৃদেহেই কোনোভাবে পুরুষ জননকোষের পরিপূরক কোষের সৃষ্টি হয়েছিল। এই পদ্ধতিকে বলা হয় পার্থেনোজেনেসিস। কয়েক প্রজাতির হাঙর, রে মাছ এবং টিকটিকির ক্ষেত্রে পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়া দেখা যায় প্রায়ই। এবার কি তাহলে সেই তালিকায় ক্যালিফোর্নিয়া কন্ডোরের নামও যুক্ত হল?
যদিও এখনই এই বিষয়ে স্পষ্ট কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের কাছে পুরো বিষয়টি এখনও অপরিষ্কার। এর আগেও মুরগি বা টার্কিস পাখির মধ্যে পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়া দেখা গিয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে স্ত্রী পাখিদের এমনভাবে বন্দি করে রাখা হত যে তাঁরা কোনো পুরুষের সংস্পর্শে আসতে পারতেন না। অথচ ক্যালিফোর্নিয়া কন্ডোরের ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেনি একেবারেই। বরং একটি পুরুষ সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর সেই সন্তানের সঙ্গেই মা পাখির প্রজনন সম্ভব। তাছাড়া এই দুই পাখির মায়েরাও আলাদা আলাদা পুরুষের সঙ্গে একাধিকবার প্রজনন প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হয়েছে। এই অবস্থায় মাত্র ২টি নমুনা দেখে বিবর্তনের পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করাই সম্ভব নয়।
তাছাড়া, দেখা গিয়েছে এই পাখিদুটির একটিও বেশিদিন বাঁচেনি। একটি পাখি ৮ বছরের মাথায় মারা গিয়েছে। অন্যটিও ২ বছরের বেশি বাঁচেনি। যেখানে একটি সাধারাণ ক্যালিফোর্নিয়া কন্ডোর ৬০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। অবশ্য পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় জন্মের কারণেই পাখিদুটির আয়ু কম হয়েছে, এমনটাও জোর দিয়ে বলতে রাজি নন বিজ্ঞানীরা। আরও বিশদ গবেষণা ছাড়া কিছুই জানা সম্ভব নয়। তবে এমন একটা ঘটনা যে রীতিমতো চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছে, সে-কথা বলাই বাহুল্য।
Powered by Froala Editor