একেই হয়তো বলে ঈশ্বর-স্পর্শ। ইতিহাসের সাক্ষী থাকল ক্যানবেরা। অজি-সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে খেলতে নেমে ১২ হাজার রানের রেকর্ড গড়লেন কোহলি। সর্বকালীন সমস্ত রেকর্ডকেই ছাপিয়ে গেল কোহলির কৃতিত্ব।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচে ৮৭ রানের ঝড়ো ইনিংসের পর ১২ হাজারের গণ্ডি থেকে মাত্র ২৩ রান দূরে ছিলেন কোহলি। মাইলস্টোন ছুঁতে অসুবিধা হয়নি। এদিন ৭৮ বল খেলে কোহলির সংগ্রহ ৬৩ রান। এতদিন পর্যন্ত এই রেকর্ডের অধিকারী ছিলেন সচিন তেন্ডুলকার। ৩০০ ইনিংস খেলে সচিন করেছিলেন ১২ হাজার রান। বিরাট সেখানে ৫৮ ম্যাচ কম খেলেই পৌঁছে গেলেন শিখরে। নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন পৃথিবীর দ্রুততম ক্রিকেটার হিসাবে। এর আগেও অবশ্য ৮০০০, ১০০০০, ১১০০০ রানের রেকর্ডের ক্ষেত্রেও পৃথিবীর দ্রুততম খেলোয়াড় ছিলেন তিনিই।
এখনও অবধি ২৫০টি একদিনের ম্যাচ খেলে ফেলেছেন বিরাট কোহলি। গড় রান প্রায় ৬০ ছুঁই ছুঁই। তবে রান কিংবা গড়ের থেকেও ক্রিকেট দুনিয়ায় বড়ো কথা হল ধারাবাহিকতা। গোটা বারো বছরের ক্রিকেট কেরিয়ার জুড়েই যা ছড়িয়ে রয়েছে বিরাট কোহলির। ভারতের জার্সিতে প্রথম সিরিজ খেলার পরেই বাদ জাতীয় দল থেকে পড়েছিলেন কোহলি। কিন্তু প্রত্যাবর্তন বোধ হয় একেই বলে। ২০০৯ শ্রীলঙ্কা সিরিজে আবার সুযোগ এসেছিল দ্বিতীয়বারের জন্য। সেই সিরিজেই দুটি সেঞ্চুরি, ম্যাচ অফ দ্য সিরিজের ক্যাপ।
তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। বিশ্বকাপ, টি-২০ বিশ্বকাপ— ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে সবই। দুটি টি-২০ বিশ্বকাপে রয়েছে ম্যান অফ দ্য সিরিজের খেতাবও। একদিনের ক্রিকেটে তাঁর সংগ্রহ ৪৩টি শতরান এবং ৬৩টি অর্ধশতরান। পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ের দক্ষতাও একাধিকবার প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশেষজ্ঞদের থেকে।
আরও পড়ুন
কোহলির টিমমেট থেকে আইপিএল স্কোয়াড; ‘ক্রিকেটার’ তেজস্বী যাদব ও মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়
তবে এখানেই কি শেষ? বয়স তো এখন সবেমাত্র ৩২ বছর। এখনও অনেকটা পথ হাঁটা বাকি। সচিনের সর্বকালীন রেকর্ডের একমাত্র দাবিদার হয়ে রইলেই তিনিই। ৪৬৩ ম্যাচে করা সচিনের ১৮ হাজার রানের রেকর্ডও হয়তো ছুঁয়ে ফেলবেন তিনি। সামনে রয়েছে বিশ্বের সর্বকালীন সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার সেই হাতছানি। অন্তত সম্ভাবনা তো সে কথাই বলে। তেমনটা চান ‘ঈশ্বর’ তেন্ডুলকারও।
আরও পড়ুন
সচিনকেও টপকে গেলেন দ্রাবিড়, গত ৫০ বছরে দেশের সেরা টেস্ট ক্রিকেটার তিনিই
২০১২ সালে সচিনের অবসরগ্রহণের পর সচিনের সেই শূন্যতা হয়তো অনেকটাই পূরণ করে দিয়েছেন কোহলি। ভারতীয় দলকে দিয়েছেন নির্ভরতা, আত্মবিশ্বাসের ছায়া। কিন্তু এসবের পরেও প্রশ্ন থেকে যায় তাঁর অধিনায়কত্ব নিয়ে। একের পর এক হাই-টেনশন ম্যাচে কি মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়ছেন কোহলি? একজন সফল ব্যাটসম্যান হিসাবে নয়, একজন অধিনায়ক হিসাবেই। এই প্রশ্নই যেন ঘুরে ফিরে আসছে বার বার ইদানীং সময়ে। বারবার উঠে আসছে সেই সমালোচনাই। ব্যাটিং এবং অধিনায়কত্ব দুই বিষয়েই মনোনিবেশ করাও যে খুব একটা সহজ কাজ তেমনটা নয়। শুধুমাত্র ব্যাটিংয়ে একাগ্রতার জন্যই একসময় দলের ক্যাপ্টেনের পদ ছেড়েছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর সচিন। তবে লড়াকু মেজাজ, পড়ে গিয়েও ফিরে ওঠার তাগিদ কোহলিকে আলাদা করে দেবে বাকিদের থেকে। খুব দ্রুত হয়তো সেই জায়গাটাকেও মজবুত করে নেবেন তিনি। এখন শুধু অপেক্ষা তারই...
আরও পড়ুন
আগামী আগস্টেই শ্রীলঙ্কা সফরে যাচ্ছেন কোহলিরা, সচল হতে চলেছে ক্রিকেট দুনিয়া
Powered by Froala Editor