চায়ের দোকান খুলেই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বুনছেন ‘চা-কাকু’ মৃদুল দেব

‘আমরা চা খাবো না? খাবো না আমরা চা?” সরল মনের এই প্রশ্নই তাঁকে রাতারাতি পরিচিত মুখ করে তুলেছিল। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল সেই চা-কাকু আর শুধু চা খাবেনই না, অন্যকেও চা খাওয়াবেন। দক্ষিণ কলকাতার বিজয়গড় অঞ্চলে চায়ের দোকান খুলে বসেছেন চা-কাকু। আজ সেই দোকান উদ্বোধন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সামাজিক মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করেছেন নেটিজেনরা।

তখনও দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হয়নি। করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা সম্বন্ধেও অনেকেই অবহিত ছিলেন না। ঠিক সেইসময়, ২০২০ সালের ২২ মার্চ সকালে জনতা কার্ফু উপেক্ষা করে অনেকেই রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। আর হঠাৎই এক চায়ের দোকানে ক্যামেরা নিয়ে হাজির হন একজন মহিলা। সেই ক্যামেরা সামনেই সরল মনে প্রশ্ন রেখেছিলেন মৃদুল দেব। আর এর পরেই তাঁর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন অনেকে। কিন্তু দেখতে দেখতে অনেক পরিস্থিতিরই বদল হয়।

কিছুদিনের মধ্যেই জানা গেল ভাইরাল চা-কাকুর আসল পরিচয়। পেশায় ঠিকা-শ্রমিক এই মানুষটি ততদিনে লকডাউনের জেরে কাজ হারিয়েছেন। এই খবর প্রচার হতেই চা-কাকুর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, অভিনেত্রী-সাংসদ মিমি চক্রবর্তী সহ নাগরিক সমাজের অনেকেই। ততদিনে তাঁকে নিয়ে নানা মিম, ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। তবে মৃদুল দেবও কিন্তু সমাজকে সমস্ত ঋণ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন নিজের কাজ দিয়ে।

করোনাবিধি অমান্য করে রাস্তায় বেরিয়ে যিনি আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন, তিনিই পরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কোভিড যুদ্ধে। ভলেন্টিয়ার হয়ে ছুটে গিয়েছেন অসুস্থ রোগীদের সাহায্যের জন্য। নিজের এলাকায় স্বাস্থ্য-সচেতনতা গড়ে তোলার কাজও করেছেন মৃদুলবাবু। তবে এসবের পরেও উপার্জনের সুযোগ নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই গিয়েছে। দফায় দফায় লকডাউনে সারা দেশের ঠিকা-শ্রমিকদের রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চা-কাকুও তার ব্যতিক্রম নন। অবশেষে নিজেই ব্যবসা শুরু করে দিলেন তিনি। আর যাঁর পরিচয়ই হয়ে উঠেছে ‘চা-কাকু’ নামে, তিনি আর কীসের ব্যবসাই বা করবেন?

চা-কাকুর কাছে চা খেতে যে অনেকেই ভিড় জমাবেন, তাতে সন্দেহ নেই। ইতিমধ্যে শহর ও রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ পাশে থাকার বার্তা জানিয়েছেন। আর স্বাধীন ব্যবসায় যে সফল হবেন চা-কাকু, সেই প্রত্যাশাই রেখেছেন সকলে। ক্রেতাদের এই শুভেচ্ছাকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে চলুন মৃদুলবাবু।

Powered by Froala Editor

More From Author See More