মাত্র ৫৩ বছরেই থেমে গেছে লড়াই। তাঁর অভিনয় যেমন অনুপ্রাণিত করেছিল অনেককে, বাস্তবে রুপোলি পর্দার বাইরেও তাঁর সাহায্যের হাত ভরসা জোগাতে অনেককেই। হ্যাঁ, ইরফান খান। ব্যক্তিগত জীবনে এমনই ছিলেন ইরফান। চারপাশের মানুষের খুশিতেই আনন্দিত হতেন তিনি। প্রাণোচ্ছল এই অভিনেতার কৃতিত্বকে স্মরণ করেই, পাল্টে দেওয়া হচ্ছে মহারাষ্ট্রের ইগাতপুরী গ্রামের নাম।
নতুন নামকরণ অনুযায়ী, ইগাতপুরী গ্রাম এবার থেকে পরিচিত হবে ‘হিরো-চি-ওয়াদি’ নামেই। মারাঠি ভাষায় এই কথার অর্থ ‘নায়কের পাড়া’। সম্প্রতি ইগাতপুরী গ্রামের জেলা পরিষদের সদস্য গোরখ বোবদে একথা জানান। এখন প্রশ্ন থেকেই যায়, ইরফান খান কীভাবে জড়িয়ে ছিলেন এই গ্রামের সঙ্গে?
প্রায় এক দশক আগে ইরফান জমি কিনেছিলেন এই গ্রামে। মূলত নির্জনে সাপ্তাহিক ছুটি কাটানোর জন্যই বন্দোবস্ত করেছিলেন তিনি। তবে গ্রামবাসীদের করুণ অবস্থা তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছিল। গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলিকে যথাসাধ্য সাহায্য করতেন প্রবাদপ্রতিম এই অভিনেতা। গ্রাম থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বেশ খানিকটা দূরে হওয়ায়, অধিবাসীরা তাঁর কাছে অনুরোধ করেছিল একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। দ্বিতীয়বার ভাবেননি ইরফান। একবাক্যেই গ্রামের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল অ্যাম্বুলেন্স।
বোবদে জানান, গ্রামের স্কুলবাড়ির পুনঃসংস্কারের পিছনেও রয়েছে ইরফানের অবদান। কোনোভাবেই ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় যাতে দ্রারিদ্রতার প্রভাব না পড়ে, সর্বদা খেয়াল রাখতেন তিনি। তাছাড়াও প্রয়োজনমতো ছাত্রছাত্রীদের জন্য বইখাতা, রেনকোট, সোয়েটার নিয়ম মেনেই পাঠাতেন ইরফান। পড়াশোনায় উৎসাহ যোগাতে, শিশুদের অনুপ্রাণিত করতে স্কুলে পাঠাতেন মিষ্টির বাক্সও। গ্রামের মানুষের মধ্যে এভাবেই মিশে গিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত অভিনেতা।
বিনয়ী এই অভিনেতার মৃত্যুশোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি গ্রামবাসীরা। তাঁদের কাছে ইরফান খান কোনো মানুষ বা অভিনেতা ছিলেন না, ছিলেন সাক্ষাৎ ফেরেস্তা। পরম ভালবাসার এই মানুষটিই মৃত্যুর পরেও আজন্ম জড়িয়ে থাকুক তাঁদের সঙ্গে, এমনটাই চান গ্রামবাসীরা। তাই তাঁদের এই উদ্যোগ। সত্যিই মৃত্যু তাঁকে স্পর্শ করতে পেরেছে কি? এই মানুষগুলোর মধ্যে দিয়েই দিব্য বেঁচে আছেন ইরফান। এভাবেই চিরকাল আদর্শ পুরুষ হয়েই থেকে যাবেন তিনি…