নির্বাচন এসে হাজির হলেই হঠাৎ রঙিন হয়ে ওঠে চারপাশ। দেওয়াল লিখন, প্ল্যাকার্ড, পোস্টার কিংবা পতাকায় ছেয়ে যায় চতুর্দিক। বর্তমানে সময়ে দাঁড়িয়ে গোটা বাংলারই চেহারা এমন। মুখ ঢেকে যায় ‘রাজনৈতিক’ বিজ্ঞাপনে। তবে এমন পরিস্থিতিতেও সম্পূর্ণ ভিন্ন ছবি শান্তিনিকেতনের নিকটবর্তী সোনাঝুরি-লাগোয়া গ্রাম বনেরপুকুরডাঙার। ভোটের মরশুমে দাঁড়িয়েও বিন্দুমাত্র তার রং লাগেনি এই গ্রামে। কারণ আদিবাসী শিল্প, সংস্কৃতি বাঁচাতেই দেওয়াল লিখনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন গ্রামবাসীরা।
কিন্তু এমন ছকভাঙা পথ বেছে নিলেন কেন গ্রামবাসীরা? বিষয় হল, এই গ্রামের সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এক শিল্প। এই গ্রামে ঢুকে পড়লেই দৃষ্টি আকর্ষণ করবে প্রতিটি বাড়ির দেওয়ালে আঁকা বিভিন্ন ছবি। যার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বহু বছরের পুরনো আদিবাসী সংস্কৃতি। তাতে একদিকে যেমন প্রতিফলিত হয় গ্রামের যাপনচিত্রের ছাপ, তেমনই কখনো কখনো তাতে মিশে থাকে বিভিন্ন উৎসবের ভাবাবেগ বা শিকারের ছবি। শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য সেই রীতি এবং শিল্পকর্মকে মুছে দেওয়া হবে তা কোনোভাবেই চান না গ্রামবাসীরা।
“নির্বাচনের প্রচার অবশ্যই জরুরি। তবে পোস্টার, ব্যানার ছাড়া প্রচার হোক এটাই আমরা চাই। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকেই প্রচার করার জন্য আমাদের গ্রামে স্বাগত। তবে মৌখিক প্রচার চলুক। সমস্ত বাড়িরই প্রায় মাটির দেওয়াল। আমাদের মা-বোনেরা খুব কষ্ট করেই সেখানে লেখেন, ছবি আঁকেন। সাময়িক কিছুদিনের জন্য দেওয়াললিখন হলেও তা সারা বছর থেকে যায়। তাই লিখতে দিচ্ছি না আমরা”, জানালেন বনেরপুকুরডাঙার সমাজকর্মী রাম সোরেন।
আরও পড়ুন
দিনবদলের স্বপ্ন দেওয়ালজুড়ে, তৌসিফ হকের ছবিতেই ভাষা পাচ্ছে বাম ইস্তেহার
আসলে দেওয়াললিখনের সময় অধিকাংশক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় রাসায়নিক রং। যার স্থায়িত্ব যেমন বেশি, তেমনই তার দরুণ ত্বরান্বিত হয় দূষণও। অন্যদিকে গ্রামের সমস্ত ছবিই আঁকা হয় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক রং দিয়ে। “লাল আর সাদা মাটি মিশিয়ে এই রং তৈরি করা হয় বাড়িতেই”, বলছিলেন রামবাবু।
আরও পড়ুন
চিত্তপ্রসাদে সাজছে দেওয়াল, ছবিতে মেহনতি মানুষের লড়াই
সব মিলিয়ে এই গ্রামে বসবাস করে প্রায় দেড়শোটি পরিবার। প্রতি পরিবারেই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ। তবে গ্রামের সংস্কৃতিরক্ষার জন্যই ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন তাঁরা। রাজি নয় রাজনীতির জন্য শিল্পের সঙ্গে কোনোভাবে আপোস করতে। কলকাতা তো বটেই বরং গোটা বাংলারই বেশিরভাগ দেওয়ালজুড়ে বর্তমানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে
আরও পড়ুন
চিনেভাষায় 'খেলা হবে', ভোটের দেওয়াল জুড়ে 'চিনে কলকাতা'
Powered by Froala Editor