গির্জায় উপাসনার পাশাপাশি হয় কীর্তনও, মেদিনীপুরের ‘বাঙালি’ পর্তুগিজদের গ্রাম এমনই

পূর্ব মেদিনীপুরের মীরপুর। বাংলার নিজস্ব একটি গ্রাম। একবার সেখানে গেলে, অন্যান্য জায়গার সঙ্গে বিশেষ কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু এই গ্রামের পেছনেই রয়ে গেছে একটি পর্তুগিজ ঐতিহ্য, সঙ্গে ইতিহাস। তবে আজ, নাম, ফুটবল আর গির্জার বাইরে কোথাও সেসবের উল্লেখ নেই। মেদিনীপুরের এই পর্তুগিজ গ্রাম আজ পুরোদস্তুর বাঙালি।

এখন এই গ্রামে বসবার করে ১৫০টি পরিবার। এদের প্রত্যেকেই কোনো-না-কোনো ভাবে পর্তুগিজদের সঙ্গে জড়িত। সেই ইতিহাস জানতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে ১৭৪২ সালে। তখনও পলাশির আমবাগানে কোনো যুদ্ধ হয়নি। কিন্তু মেদিনীপুরের মহিষাদলে আঘাত হানল বর্গিরা। তাঁদের হাত থেকে রাজত্ব বাঁচাতে উঠে পড়ে লাগলেন সেখানকার রাজা আনন্দমোহন উপাধ্যায় এবং রানী জানকী দেবী। সাহায্য চাইলেন পর্তুগিজদের কাছ থেকে। ১২ জন শক্তিশালী পর্তুগিজদের সহায়তায় বর্গিদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পান তাঁরা। উপহারস্বরূপ, ওই পর্তুগিজদের মীরপুরের অনেকটা জমি দিয়ে দেন রাজা-রানি। ব্যস, তারপর থেকে সেখানেই বসবাস তাঁদের।

ধীরে ধীরে স্থানীয় মেয়েদের বিয়ে করে সংসার পাতা শুরু হয়। সেই সঙ্গে শুরু হয় পর্তুগিজ থেকে ভারতীয় হওয়ার যাত্রা। সেই ১২ জনের উত্তরসূরিরাই আজ বসবাস করছেন এখানে। নামে পর্তুগিজ ছাপ থাকলেও, বাকি সমস্ত ক্ষেত্রে তাঁরা খাঁটি বাঙালি, খাঁটি ভারতীয়। যত সময় গেছে, চোখের নীল মণি বদলে গেছে কালোয়। গির্জায় যিশুর উপাসনার পাশাপাশি হয় কীর্তনও। বড়দিনের মেলায় কেকের পাশে বিক্রি হয় জিলিপি, গজা, মিষ্টি। শুধু ফুটবল খেলা হলে পর্তুগালের সমর্থনে গলা ফাটায় মীরপুরের গ্রামবাসীরা। তবে তাঁরা এও বলছেন, ভারতের সঙ্গে যদি খেলা পড়ে, তবে পর্তুগালকে ছেড়ে ভারতকে সমর্থন করবেন তাঁরা।

এখনকার নাগরিকত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তার সময়ও নিশ্চিন্তে রয়েছেন তাঁরা। তাঁরা যে মনেপ্রাণে, আচার আচরণে ভারতীয়, বাঙালি। ভারতেরই নাগরিক। ভারত, পর্তুগাল— দুটো সত্তা নিয়েই বেঁচে আছেন তাঁরা। বছরের পর বছর ধরে।

তথ্যসূত্র - নিউজ ১৮ বাংলা