৪৭ দিন লড়াইয়ের পর সাফল্য, করোনামুক্ত বৃদ্ধাবাসের সকল আবাসিক

করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত দেশে। আর এই ভাইরাসের প্রথম শিকার প্রবীণ নাগরিকরা। কিন্তু মানুষের ইচ্ছাশক্তি যেখানে প্রবল, সেখানে প্রকৃতিকেও হার মানতেই হয়। এই মহামারীর পরিস্থিতিতে তেমনই এক অনবদ্য কাহিনির জন্ম দিলেন ফ্রান্সের একটি বৃদ্ধাবাসের কর্মীরা।

ফ্রান্সের লিয়ন শহরের কাছেই ভিলানোভা বৃদ্ধাবাস। সব মিলিয়ে ১০৬ জন প্রবীণ নাগরিকের বাস সেখানে। আর তাঁদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে আছেন ভ্যালেরি মার্টিন ও তাঁর ১২ জন কর্মী। প্রত্যেককে মিলে এক হাসিখুশি জমাটি পরিবার। কিন্তু এর মধ্যেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই চিন্তার ভাঁজ পড়ে মার্টিনের কপালে। তবে সেই মুহূর্তেই তিনি সংকল্প করেন, কোনোভাবেই এই বৃদ্ধাবাসের ভিতরে করোনা ভাইরাসকে ঢুকতে দেবেন না তিনি।

গত ১৭ মার্চ মার্টিন ঘোষণা করেন, সমস্ত বৃদ্ধাবাসটি একটি আইসোলেশন ইউনিট হিসাবে গড়ে তোলা হবে। এই মহামারীর নিয়ন্ত্রণে আসার আগে পর্যন্ত কেউ বাড়ির বাইরে যাবেন না, এবং বাইরে থেকেও কেউ বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। মার্টিনের এই সিদ্ধান্তে সহমত হন তাঁর কর্মচারীরাও। তারপর প্রত্যেকেই একে একে বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এলে বাড়ির সদর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সেইদিন থেকেই শুরু হয়ে যায় একটি যুদ্ধ। কর্মীদের প্রত্যেকের একসঙ্গে রাত কাটানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা ছিল না। ফলে কাউকে মেঝেতে বিছানা করে, কাউকে রাত জেগে কাটাতে হয়। কিন্তু তার থেকেও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, যাঁদের জন্য তাঁদের এই লড়াই সেই প্রবীণ নাগরিকদের মানসিক অবস্থা। অকস্মাৎ লকডাউনের কথা শুনে অনেকেই ভেঙে পড়েন। অনেকে ভাবতে থাকেন, আর কোনদিনই হয়তো প্রিয় মানুষদের সঙ্গে দেখা হবে না। ক্রমশ একধরনের অবসাদ ঘিরে ধরে তাঁদের। কিন্তু মার্টিন এবং তাঁর ১২ জন কর্মী এই লড়াইটাও জিতে যান। সারাদিন খেলায় আর আড্ডায় তাঁরা মাতিয়ে রাখতেন প্রত্যেককে। এভাবেই এই কঠিন পরিস্থিতিতেও নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন প্রত্যেককে।

এভাবেই একটার পর একটা দিন কাটছিল। সমস্ত পৃথিবীতে করোনা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার খবর আসছিল। আসছিল মৃত্যুর খবর। কিন্তু ভিলানোভা নার্সিং হোমে কারোর কোনো উপসর্গ দেখা দেয়নি। এভাবেই ৪৭ দিন কাটার পর রুটিন মাফিক প্রত্যেকে আবাসিকের পরীক্ষা হয় গত ৪ মে। কিন্তু সেখানেও দেখা যায়, ১০৬ জন আবাসিকের কারোর শরীরেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেনি। দীর্ঘ চেষ্টার পর অবশেষে বিজয়ের স্বাদ পেলেন মার্টিন ও তাঁর কর্মীরা। ভিলানোভা নার্সিং হোমে এখন এক উৎসবের মেজাজ। তবে লকডাউন এখনও জারি আছে। আর আবাসিকরাও এই লকডাউনকে গ্রহণ করেছে সহজভাবেই।

Latest News See More