৩০ বছর আগে প্রয়াত শিল্পীর গানেই স্বৈরাচার থেকে মুক্তির স্বপ্ন বুনছে বেলারুশ

প্রতিবাদের গান কীভাবে জন্মায়? প্রবাদের মঞ্চ থেকে? নাকি কোনো পুরনো গানই হয়ে ওঠে প্রতিবাদের মন্ত্র? ইতিহাসের পাতা ওল্টালে এমন অনেক উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায়। সেটা আগের শতকের আমেরিকার বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলন হোক বা সাম্প্রতিক বেলারুশ আন্দোলন। আর সেই চলমান আন্দোলনের দিকে তাকালে দেখতে পাওয়া যাবে, তিন দশক আগে প্রয়াত এক রুশ শিল্পী কীভাবে আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। সেই প্রয়াত রক শিল্পীর নাম ভিক্টর সয়। আর উঠে আসছে তাঁর বিখ্যাত গান ‘কোচু পারমানেন’ বা ‘উই আর অ্যাওয়েটিং চেঞ্জেস’।

ভিক্টর সয় ছিলেন ৮০-র দশকের উত্তাল রাশিয়ার একজন সামান্য কারখানা কর্মচারী। রাশিয়া তখনও সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু সেখানে রাষ্ট্রের শাসনের বিরুদ্ধে ক্রমশ জমা হয়েছে বিক্ষোভ। নানা দলে ভাগ হয়ে গিয়েছে রাশিয়ার মানুষ। কেউ কেউ সমাজতান্ত্রিক কাঠামোকেই দায়ী করছেন। আশ্রয় নিতে চাইছেন পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায়। কেউ আবার সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেই খুঁজেছেন মুক্তির উপায়। তবে কোনো রকমের দলীয় রাজনীতির জুতো পায়ে পরে নেননি ভিক্টর। বরং প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসাবে তুলে নিয়েছিলেন তাঁর গিটার।

রক মিউজিক তখনও আন্তর্জাতিক ফ্যাশানে পরিণত হয়নি। গানের এই ঘরানার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল মানুষের সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন। গানের কথায়, সুরে একটা নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন বুনতেন শিল্পীরা। সেইসময় রাশিয়ার লেনিনগ্রাদে গোপনে রক ব্যান্ড গড়ে তুলেছিলেন ভিক্টর। প্রথাগত মঞ্চ বা স্টুডিও তাঁরা তখন পেতেন না। কিন্তু কখনো বারে বা রেস্টুরেন্টে, কখনো বা কোনো বাড়ির ঘরোয়া অনুষ্ঠানে গান গাইতে যেতেন তাঁরা। এভাবেই একটু একটু করে বাড়ছিল জনপ্রিয়তা। কিন্তু ঠিক এইসময় ১৯৯০ সালের আগস্ট মাসে একটি মোটর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন ভিক্টর।

তারপর ঠিক ৩০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। আবার এসেছে একটা আগস্ট মাস। আর ঠিক এই সময় ইউরোপের শেষ স্বৈরাচারী শাসক আলেকজান্ডার লুকাসেনকোর বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের দাবিতে জড়ো হয়েছেন বেলারুশের মানুষ। তাঁদের প্রত্যেকের মুখেই এখন ভিক্টর সয়ের সেই বিখ্যাত গান, ‘উই আর অ্যাওয়েটিং চেঞ্জেস’। আর দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হচ্ছে ভিক্টরের মুখ। তিনিই এই আন্দোলনের প্রাণপুরুষ যেন। হ্যাঁ, পরিবর্তন তো অনেকেই চান। সে-কারণেই ২০১১ সালে পুতিনের বিরোধী এবং সমর্থক দুদলের মুখেই শোনা গিয়েছিল ভিক্টরের এই গান। সবাই একটা পরিবর্তনের জন্য অন্ধকারে পথ খুঁজছেন। খুঁজছেন সেই সুদিনের সন্ধান। যেখানে সবাই ভালোবাসবেন, ভালো থাকবেন একসঙ্গে।

আরও পড়ুন
‘সবহি কা খুন হ্যায় সামিল ইয়াহাঁ কি মিট্টি মে,’ প্রতিবাদের ভাষা যুগিয়েছিলেন রাহাত ইন্দোরি

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
প্রতিবাদের আগুন ছড়াল ব্রিটেনে, ভাঙা হল দাস ব্যবসায়ীর মূর্তি, রেহাই নেই ‘রেসিস্ট’ চার্চিলেরও