আমেরিকার বোমায় বিধ্বস্ত ভিয়েতনাম, যুদ্ধের দিনে ত্রাণ পাঠাল সেই ‘শত্রু’ দেশেই

আমেরিকা আর ভিয়েতনাম— বিশ্বের দুই প্রান্তের দুই দেশ। সংস্কৃতিও আলাদা। তবুও একসঙ্গে নাম উচ্চারণ করলে অনেকেরই শিহরণ খেলে যায়। কারণটা আর কিছুই নয়, গত শতাব্দীর পঞ্চাশ থেকে সত্তর দশক অবধি চলা যুদ্ধ। বিশ্বের সর্বত্র যা পরিচিত ‘ভিয়েতনাম ওয়ার’ নামে। এককালের এই দুই প্রবল প্রতিপক্ষকে আজকের দিনে মিলিয়ে দিল করোনা। আমেরিকা যেখানে ভাইরাসের সংক্রমণে প্রবলভাবে বিপর্যস্ত, তখন সেখানেই ওষুধ পৌঁছে দিল ‘শত্রু’ ভিয়েতনাম।

১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫— এই দীর্ঘ ২০ বছর বিশ্ব ইতিহাস তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল। ভিয়েতনামের মাটিতে আমেরিকান সেনার আক্রমণ, সেখানকার কম্যুনিস্টদের সঙ্গে সংঘাত ও তারপর যুদ্ধ— এই ঘটনা নিয়ে প্রচুর চর্চা হয়েছে বিশ্বজুড়ে। এমনকি, আজও হয়ে চলেছে। এই যুদ্ধের কাহিনি, ধ্বংসলীলা ও অন্য বৃত্তান্ত পৃথিবীর প্রায় সমস্ত কোণায় ছড়িয়ে পড়েছিল। বাংলার বুকেও শ্লোগান তৈরি হয়- ‘তোমার নাম আমার নাম/ ভিয়েতনাম ভিয়েতনাম।’ আমেরিকা যে অপ্রতিরোধ্য নয়, এশিয়ার একটি অনুন্নত দেশও যে তাঁদের হারাতে পারে, এমন ঘটনা শিহরণ জাগায় সবার। অবশ্য ভিয়েতনামেও আগুন জ্বলেছিল। আমেরিকানদের ‘নাপাম বোমা’য় ছারখার হয়ে গিয়েছিল সেখানকার অধিবাসীরা। তবুও, দাঁতে দাঁত চেপে লড়েছিল তাঁরা।

তারপর পেরিয়ে গেছে আরও অনেকগুলো বছর। ২০২০-তে গোটা বিশ্ব নতুন এক যুদ্ধের সম্মুখীন। নাম, করোনা। এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লাখ ছুঁইছুঁই! একা আমেরিকাতেই আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে নয় লাখ পেরিয়ে গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ আজ ব্যাকফুটে। এমন অবস্থায় সাহায্যের জন্য এগিয়ে এল সেই ভিয়েতনাম! আর কাকে সাহায্য করছে, আমেরিকাকে! গোটা বিশ্বকে এমনই অভূতপূর্ব ঘটনা দেখার সুযোগ করে দিল কোভিড-১৯।

আপাতত ভিয়েতনাম থেকে সাড়ে চার লাখ ডাক্তারি স্যুট মার্কিন প্রদেশে পৌঁছে গেছে। যেসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করছেন করোনার সঙ্গে, তাঁদের সুরক্ষার জন্যই এই স্যুট। এছাড়া ইউরোপের পাঁচটি দেশে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মাস্কও পাঠিয়েছে তারা। ভিয়েতনামের করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। এখনও অবধি সেখানে ২৭০ জন আক্রান্ত হয়েছেন, তার মধ্যে ২২৫ জন সুস্থও হয়ে গেছেন। তবে, এসব ছাপিয়েও উল্লেখ্য হয়ে উঠেছে ভিয়েতনামের এই মানবিক রূপ।