কেরিয়ারে একের পর এক আন্তর্জাতিক সিনেমা, বাংলায় তবু 'ব্রাত্য' ভিক্টর!

/১৪

১৯৭৭ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ দিয়ে পর্দায় পা রাখা। ‘ঘরে-বাইরে’-র নিখিলেশের চরিত্রেও ভিক্টর ব্যানার্জিকে বেছে নিয়েছিলেন পরিচালক। বাংলা এবং হিন্দির পাশাপাশি মালয়ালম, তেলেগু, ওড়িয়া ভাষার ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি। তবু সমকালের অসংখ্য নায়কের ভিড়ে যেন নিজের জায়গাটা ঠিক তৈরি করতে পারেননি। অথচ এই ভারতীয় অভিনেতার খোঁজে বারবার এসেছেন বহু বিদেশি পরিচালক। বলা যায়, তিনিই ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক অভিনেতা।

/১৪

শুরুটা হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। এর আগে মাত্র দুটো সিনেমায় অভিনয় করেছেন ভিক্টর ব্যানার্জি। উত্তম কুমারের সঙ্গে অভিনীত ‘দুই পৃথিবী’ তখনও মুক্তি পায়নি। এরপর ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’-তে একটি চরিত্র পেলেন তিনি। এরই মধ্যে ডাক এল একেবারে হলিউড থেকে। অস্কারজয়ী পরিচালক জেমস আইভরির ‘হুবালু ওভার জর্জিয়া অ্যান্ড বনিজ পিকচার্স’-এর জন্য প্রয়োজন দুটি ভারতীয় চরিত্র। অপর্ণা সেনের সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে আগেই। অন্য চরিত্রটির জন্য পরিচালকের পছন্দ ভিক্টর ব্যানার্জি। আন্তর্জাতিক সিনেমায় সেই প্রথম পা রাখা।

/১৪

১৯৮২ সালে চেক পরিচালক ওয়ার্নার স্কেফারের ‘জয়পুর জাংকশন’ ছবিতে পরের সুযোগ। একেবারে মুখ্য ভূমিকায় ভিক্টর ব্যানার্জি। যদিও এখানেও তিনি ভারতীয়। সিনেমাটি যথেষ্ট প্রশংসা পেলেও বাণিজ্যিক সাফল্য পেল না। পরে তার সমস্ত প্রিন্টও নষ্ট হয়ে যায়।

/১৪

এইসময় হলিউডের বিখ্যাত পরিচালক ডেভিড লিন ‘প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’ নামের একটি ছবির পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু নায়ক হিসাবে চাই একজন ভারতীয়কে। প্রথম পছন্দ ভিক্টর ব্যানার্জি। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ১০টির বেশি পুরস্কার পায় ছবিটি। ভিক্টর ব্যানার্জিও গোল্ডেন গ্লোব ফেস্টিভ্যালে সেরা অভিনেতা পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

/১৪

১৯৮৬ সাল। এবার যাত্রা গ্রেট ব্রিটেনে। অস্কারজয়ী পরিচালক রোনাল্ড নিয়ামের ছবি ‘ফরেন বডি’। পোস্টারে আবারও সেই চেনা মুখ।

/১৪

‘ফরেন বডি’ মুক্তি পাওয়ার পর ইংল্যান্ডে রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ভিক্টর। এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন যে, তাঁকে লন্ডনের অপেরায় যিশু খ্রিস্টের চরিত্রেও অভিনয় করতে দেখা যায়।

/১৪

১৯৮৮ সাল। আমেরিকা-ইউরোপের পর এবার ভিক্টরের যাত্রা অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে। পরিচালক জেরিমি লন্ডন তৈরি করছেন দুই এপিসোডের মিনি সিরিজ ফিল্ম ‘দাদাহ ইজ ডেথ’। সেখানেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন ভিক্টর।

/১৪

১৯৯২ সালে মুক্তি পেল ক্রিস্টোফার কলম্বাসের অভিযানকে ঘিরে তৈরি একটি টিভি সিরিজ ‘দ্য ট্রু অ্যাডভেঞ্চার অফ ক্রিস্টোফার কলম্বাস’। এবারে প্যাট্রিক বার্লো, মিরান্ডা রিচার্ডসনদের সঙ্গে এক পর্দায় ভিক্টর।

/১৪

সেই বছরই রোমান পোলোনস্কির ‘বিটার মুন’ ছবিতে একটি ছোট্ট চরিত্রে দেখা যায় ভিক্টর ব্যানার্জিকে।

১০/১৪

এরপর ২০০৬ সালে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পরিচালক নীল বিশ্বাসের ‘ব্র্যাডফোর্ড রায়ট’ সিনেমাতে অভিনয় করেন ভিক্টর। পরের বছর বাফটা-ব্রেকথ্রু পুরস্কার পায় সিনেমাটি।

১১/১৪

২০১৬ সালে গোরান পাসকালজেভিকের ‘দেবভূমি’, ২০১৮ সালে ক্লেয়ার ডেনিসের ‘হাই লাইফ’ – নায়ক চরিত্র থেকে একটু একটু করে সরে আসছেন ভিক্টর। বয়স বেড়েছে। তবে তাঁকে ঘিরে চাহিদা এখনও কমেনি।

১২/১৪

২০১৮ সালেই মুক্তি পায় আর্জেন্টিনার পরিচালক পাবলো সিজারের তৈরি ‘থিঙ্কিং অফ হিম’। রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর জীবনের উপর আধারিত এই সিনেমার কিছু ক্লিপিং সম্প্রতি বেশ ভাইরাল হয়ে উঠেছিল সামাজিক মাধ্যমে। রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে অভিনেতাকে দেখে চমকে উঠেছেন সকলে। ঠিক যেন কবিগুরু স্বয়ং এসে দাঁড়িয়েছেন। বলা বাহুল্য, এখানেও রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায় সেই ভিক্টর ব্যানার্জিই।

১৩/১৪

এখানেই শেষ নয়। ভিক্টর ব্যানার্জির সূত্রেই কলকাতার বিদেশযোগও ঘটেছে। ভিক্টর ব্যানার্জির সঙ্গে ‘চৌরহেন’ সিনেমায় অভিনয় করতে কলকাতায় ছুটে এসেছিলেন চার্লি চ্যাপলিনের নাতনি কিয়েরা চ্যাপলিনও।

১৪/১৪

এমন একজন অভিনেতা কিন্তু নিজের দেশেই যোগ্য সম্মানটুকু পেলেন না। জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ভারতের কোনো ভাষাতেই খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাঁকে। নিজের দেশে চিরকাল আন্ডাররেটেড হয়েই থেকে গেলেন ভিক্টর ব্যানার্জি।

Powered by Froala Editor