উত্তমকুমারের ৭২টি সিনেমার ক্যামেরাম্যান ছিলেন তিনি, দারিদ্র্য থেকে চিরমুক্তি বৈদ্যনাথ বসাকের

একটা সময় তাঁর হাতে ঘুরত ক্যামেরা। ‘রোল, সাউন্ড, অ্যাকশন’-এর ভিড়ে কেটে যেত সময়। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, দারিদ্র্য টুঁটি চেপে ধরেছে। লোকে ভুলে গেছে তাঁর পরিচয়। কিন্তু বৈদ্যনাথ বসাক ভোলেননি সেই সব দিনের কথা। উত্তমকুমার, রাজ কাপুরের সঙ্গে কাজ করেছেন। মহানায়কের বেশিরভাগ ছবিরই ক্যামেরার দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। জীবনের শেষে এসে অভাব আর বিস্মৃতিই সঙ্গী হল তাঁর। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নিজের একচিলতে বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বৈদ্যনাথ বসাক।  

 

রাজ কাপুরের প্রযোজনায় তৈরি হবে ‘বুট পলিশ’ সিনেমা। সেখানেই ক্যামেরাম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন বৈদ্যনাথ বসাক। তখন তিনি রীতিমতো তরুণ। তাঁর কাজ এত ভালো লাগে যে, নিজের পরের সিনেমার জন্যও তাঁকে নির্বাচিত করেন রাজ কাপুর। কিন্তু বিনয়ের সঙ্গে সেটা প্রত্যাখ্যান করেন বৈদ্যনাথবাবু। চলে এলেন কলকাতায়; বাংলায় বসে বাংলা সিনেমায় কাজ করবেন তিনি। রাজ কাপুরের সেই সিনেমাটির নাম ছিল ‘শ্রী ৪২০’… 


‘অগ্নিপরীক্ষা’ দিয়ে যাত্রা শুরু উত্তমকুমারের সঙ্গে। তারপর নয় নয় করে শুধু মহানায়কের সঙ্গেই ৭২টি ছবিতে কাজ করেছেন। তাঁর ক্যামেরাই রূপ দিয়েছে উত্তমের সেই ভুবন ভোলানো হাসির। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে অন্যতম নাম হয়ে উঠেছিলেন বৈদ্যনাথ বসাক। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গেও কাজ করেছিলেন। কয়েকদিনের জন্য নেপালের রাজপরিবারের ফটোগ্রাফারও ছিলেন। সেখানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে আবারও ফিরে এসেছিলেন এই শহরে। 


কিন্তু তাঁকে কি মনে রেখেছিলাম আমরা? প্রতিদিন নিজের বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে আসতেন রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনে। আরও অনেকের সঙ্গে ভিড়ে মিশে যেতেন। চাওয়া বলতে একটু ভাত। তাঁর যে আর কিছুই নেই। মিশনের সেই খাবার খেয়েই আবার ফিরে যেতেন নিজের বিবর্ণ ঘরে। স্ত্রী মারা গেছিলেন আগেই, ছেলেরও আয় সামান্য। এদিকে চলচ্চিত্র জগতও তাঁকে সেভাবে মনে রাখেনি। জীবনের শেষ লগ্নে এসে কিছু সম্মান পেয়েছিলেন। ২০১৬ সালে রাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পাড়’ ছবিতে শেষ কাজ করেছিলেন তিনি। টলিউডের কিছু কলাকুশলীও এগিয়ে এসেছিলেন সাহায্যের জন্য। কিন্তু ততদিনে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। সেই দারিদ্র্যের যাত্রা, চলচ্চিত্রের যাত্রা থামল বৃহস্পতিবার। নিজের মলিন, নোনাধরা ঘরেই ৯৬ বছর বয়সে মারা গেলেন ক্যামেরাম্যান, শিল্পী বৈদ্যনাথ বসাক।

Powered by Froala Editor