‘অদ্ভুত ঠান্ডা মাথা ছিল ছেলেটার। রেফারির ডিসিশনকে চ্যালেঞ্জ করা তো দূরে থাক, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একটা খারাপ কথাও কখনো মুখ দিয়ে বেরোয়নি। এমনকি প্রচণ্ড ‘টাইট ম্যাচে’ও ওর মুখ ভাবলেশহীন। ৮৮তে ওমানের সঙ্গে আমাদের খেলাটাই মনে পড়ে যায়। আমরা ১-০ গোলে জিতেছিলাম। ওমানের ভয়ঙ্কর এটাকের বিরুদ্ধে বাবলু(সুব্রত ভট্টাচার্য) আর ও দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিল... কোনো ক্যাম্পে ওকে নিয়ে কাউকে খারাপ কথা বলতে দেখিনি আমি। হাসিখুশি ছেলে। অত্যন্ত ভদ্র। আর ডাই-হার্ড মোহনবাগানি। সবাই খুব ভালোবাসত ওকে। এমনভাবে চলে গেল…’
বলতে বলতে গলা ধরে আসছিল কিংবদন্তি ফুটবলার প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আশির দশকে গড়ের মাঠ কাঁপিয়েছেন বহু বাঙালি ফুটবলার। তাঁদের কাউকে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গল্প। মিথ। আবার কেউ কেউ উপযুক্ত প্রচারের অভাবে হারিয়ে গিয়েছেন সময়ের সঙ্গে। তেমনই একজন মোহনবাগানের সত্যজিৎ ঘোষ। ছিলেন দুর্ভেদ্য ব্যাকলাইনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুব্রত ভট্টাচার্য-এর ছায়া। ৬২ বছর বয়সে চলে গেলেন তিনি। সোমবার সকালে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁর। চুঁচুড়া-ইমামবড়া হাসপাতালে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
১৯৮১ সালে রেলওয়েজ থেকে মোহনবাগানে আসা। মাঝে মহামেডানের জার্সি গলিয়েছেন। পরে ফিরে এসেছিলেন মোহনবাগানে। সেখান থেকেই অবসর নিয়েছিলেন। সত্যজিতের খেলা যাঁরাই দেখেছেন তাঁদের মতে এমন টিম প্লেয়ার মোহনবাগানে কমই এসেছে। অনেকটা জমি নিয়ে খেলতে পারতেন। হেডিং ছিল চোখে পড়ার মতো। উচ্চতায় হারাতে পারতেন বহু ফুটবলারকেই। পরিছন্ন ট্যাকল, এবং নাছোড় মানসিকতা। সত্তর মিনিট জান-প্রাণ দিয়ে লড়তেন শেষ বাঁশি বাজা অব্দি।
‘এন্টিসিপেশনটা একটু বেটার হলে আরো অনেকটা সময় ধরে খেলতে পারত সত্যজিত। ওর খেলা সম্পর্কে আমার দুটো সমালোচনা। এক, কাকে কখন কোনসময় খেলবে এটা ও একটু কমই বুঝত। আর টার্নিং-এ খানিক স্লো ছিল। যেটার ফলে গতিতে ওকে ছাপিয়ে যেত অনেকে। তবে কী জানেন, এগুলো তো উপযুক্ত ট্রেনিং আর স্ট্রাটেজির ব্যাপার। সত্যজিৎ ট্রেনিং পেলে ও বাংলার সেরা ব্যাক হয়ে উঠতে পারত। কিন্তু এত প্রচারবিমুখ ছিল, যে ক্লাবকর্তা কোচদের নজরেই পড়ল না সেভাবে। টিকে থাকতে গেলে নিজের ঢাকটা একটু পেটাতে হয় যে… কাঁচা হিরে হয়েই রয়ে গেল সত্যজিৎ।’
আরও পড়ুন
‘সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার’ তিনি, জীবনের মতো মৃত্যুকেও ঘিরে রাখলেন নীরবতায়
প্রশান্তবাবুর গলায় আক্ষেপের সুর। সত্যজিৎ ঘোষ ছিলেন ময়দানের কাঁচা হিরে। উপযুক্ত পরিকাঠামো-প্রচারের অভাবে হারিয়ে যান বহু ফুটবলার। তবে সত্যজিৎ হারিয়ে যাননি। প্রশান্তবাবুর কথাতে বলা যেতে পারে, ‘যেটুকু খেলেছে, বাংলার ফুটবলকে দিয়ে গেছে অনেকটা।’
আরও পড়ুন
আবারও মৃত্যুর থাবা, চলে গেলেন কিংবদন্তি ফুটবলার চুণী গোস্বামী
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পেলের সঙ্গেই পেয়েছেন ফিফার সর্বোচ্চ সম্মান, একমাত্র এশীয় ফুটবলার বাংলার পিকে-ই