আবারও নক্ষত্রপতন বাংলার সংস্কৃতি জগতে। একের পর এক শিল্পী এবং কিংবদন্তিকে আমরা হারিয়েছি গত দেড় বছরে। সেই সরণি ধরেই এবার এসে পড়ল বাচিকশিল্পী গৌরী ঘোষের নাম। আধুনিক প্রজন্মের আবৃত্তির ধারা বদলে দিয়েছিলেন যে কয়েকজন শিল্পী, তাঁদের মধ্যে অন্যতম পার্থ ঘোষ – গৌরী ঘোষ জুটি। তাঁদের আর একসঙ্গে দেখা যাবে না কোনো কবিতা বা শ্রুতিনাটকের অনুষ্ঠানেই।
গৌরী ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্ণ-কুন্তী-সংবাদ’-এর কথা উঠলেই মনে আসে তাঁর গলা। স্পষ্ট ভরাট উচ্চারণ আর তেমনই অনায়াস অভিব্যক্তি। কতটা সহজে কবিতার অভিব্যক্তিকে গলায় ফুটিয়ে তোলা যায়, সেটাই যেন বারবার দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন গৌরীদেবী। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তাই তিনি ছিলেন মায়ের মতো। শুধু বাচিকশিল্পীদেরই নয়, সঙ্গীতশিল্পীদেরও উচ্চারণ স্পষ্ট করতে শেখাতেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন গৌরীদেবী। তবে চিকিৎসায় যথেষ্ট সাড়াও দিয়েছেন। এত তাড়াতাড়ি তাঁকে হারাতে হবে, এমনটা যেন কল্পনাও করেননি কেউ। কিছুদিন আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তারপর থেকেই শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে শুরু করে। বুধবার ভেন্টিলেশনেও নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু চিকিৎসকদের অক্লান্ত চেষ্টার পরেও শেষরক্ষা হল না। বৃহস্পতিবার সকালেই শিল্পের জগৎ ছেড়ে চিরতরে রওয়ানা হলেন গৌরীদেবী।
রেডিও উপস্থাপক হিসাবে একসঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন পার্থ ঘোষ এবং গৌরী ঘোষ। দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন আকাশবাণীর সঙ্গে। এর পাশাপাশিই একসঙ্গে শুরু করেন আবৃত্তি পরিবেশন। প্রায় ৫ দশক ধরে শিল্পের জগতকে ঋদ্ধ করেছেন তাঁরা। গৌরীদেবীর মৃত্যুতে স্বাভাবকভাবেই শোকস্তব্ধ বাংলার সংস্কৃতি জগৎ। এই ক্ষতি কখনও পূরণ হওয়ার নয়।
Powered by Froala Editor