এবার করোনা থাবা বসাল টলি পাড়ায়। টলিউড হারাল চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম এক ব্যক্তিত্বকে। চলে গেলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা অরুণ গুহঠাকুরতা। বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
বেশ কিছুদিন আগে থেকেই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। গতমাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন হৃদরোগে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সিনেমা জগতের অনেকেই। তাঁর চিকিৎসা ভারগ্রহণ করেছিল রাজ্য সরকার। তবে কিছুদিন আগেই দেখা দিয়েছিল করোনার উপসর্গ। ভর্তি হয়েছিলেন এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে। পজিটিভ এসেছিল করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট। চলছিল চিকিৎসাও। তবু লড়াই শেষ করে ছুটি নিলেন ‘সিনেমাওয়ালা’। মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তবে তাঁকে শুধু ‘অভিনেতা’ বলা হলে অনেকটা কমতি থেকে যায়। ক্যামেরার সামনে এবং পিছনে, উভয় জায়াগাতেই দক্ষতা ছিল তাঁর। অভিনয়ের পাশাপাশিই সামলেছেন টেকনিশিয়ান এবং সহ-পরিচালনার দায়িত্ব। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন বহু ছবিতে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ‘কালপুরুষ’। এছাড়াও পরিচালনায় সহযোগিতা করেছেন গৌতম ঘোষ, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো পরিচালককে। বিসর্জন, কেয়ার অফ স্যর, সিনেমাওয়ালা, ল্যাপটপ, শব্দ, বসু পরিবার, ছোটদের ছবি-র মতো সাম্প্রতিক সিনেমাগুলিতে তাঁর অভিনয় নজর কেড়েছিল সকলের। সিনেমাওয়ালা ছবির জন্য সেরা সহকারী অভিনেতার সম্মানেও ভূষিত হয়েছিলেন তিনি।
সিনেমা জগতের সঙ্গে যাঁর ঘনিষ্ঠতা, ভালবাসা ছিল এতটা; সেই অরুণ গুহঠাকুরতা বেশ খানিকটা আড়ালেই থেকেছেন চিরকাল। লাইম লাইটের থেকে বেশ খানিকটা দূরে থাকতেই পছন্দ করতেন তিনি। সহজ সরল চরিত্রের অরুণবাবু ছিলেন মাটির মানুষ। ইউনিটের প্রত্যেক সদস্য, কলা-কুশলীদের চিনতেন হাতের তালুর মতো। যেকোনো বিষয়েই পথ দেখাতেন একজন অভিজ্ঞ অভিভাবক হিসেবে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় থেকে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় - দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রত্যেকেই। পরিচালক অতনু ঘোষও তাঁর সম্পর্কে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “কি অনায়াসে আত্মিক হয়ে যেতেন চরিত্রের সঙ্গে, তার কত নজির রয়ে গেল। হয়তো কদিন বাদেই অরুণবাবুকে নিয়ে কথা, আলোচনা থেমে যাবে, কিন্তু বাংলা ছবির জগতে এইসব মানুষের অভাব অনুভূত হবে বহুকাল ধরে।” তাঁর প্রয়াণ যে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি টেনে দিল, তা বোধহয় বলাই যায়...
Powered by Froala Editor