“আমি ছোটো থেকে যাঁদের সঙ্গে বড়ো হয়েছি, কলেজ জীবন থেকে যাঁদের সঙ্গে মেলামেশা করেছি, তাঁদের সবার সঙ্গে একটা প্ল্যাটফর্মে অংশ নিতে চেয়েছিলাম আমি।” বলছিলেন রন্তিদেব মুখার্জি। এই ভাবনা থেকেই শুরু হয়েছিল ‘ভেরিটাস ২০২২’-এর (Veritas 2022) পরিকল্পনা। উপলক্ষ্য অবশ্য একটি কবিতার বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। রন্তিদেব ও তাঁর সহকর্মী অরিন্দম লাহিড়ীর লেখ কিছু বাংলা ও ইংরেজি কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘Transবাদ’। প্রকাশনায় বীরুৎজাতীয় (Birutjatio) সাহিত্য সম্মিলনী। তবে কেবল বই প্রকাশের অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি ‘ভেরিটাস ২০২২’। বরং গানে, কথায়, ছবিতে সারাদিন ধরে সৃষ্টিশীলতায় বুঁদ হয়ে থেকেছেন নানা শিল্পী।
দক্ষিণ কলকাতার সন্তোষপুরে কিশোরভারতী ক্রীড়াঙ্গনের কাছেই ‘আর্টিজম স্টুডিও’। গত ২৮ আগস্ট সেখানেই আয়োজিত হল ‘ভেরিটাস ২০২২’। সকাল থেকেই সেখানে সুমিত দাস, শুভদীপ দে, অর্ক আলম সহ অন্যান্য শিল্পীরা বসে পড়েছিলেন রং-তুলি সাজিয়ে। অনুষ্ঠানে আগত দর্শকদের সামনেই এঁকে চলেছেন একের পর এক ছবি। দর্শকরা নিজেদের পছন্দ মতো সেইসব ছবি সংগ্রহও করছেন। অন্যদিকে মূল অনুষ্ঠান মঞ্চে ততক্ষণে গজল ও আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন ধারার গানের সুর বাঁধতে শুরু করেছিলেন তৈশী নন্দী।
অবশ্যই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল ‘Transবাদ’ বইটির প্রকাশ এবং সেই উপলক্ষ্যে অভিনেতা ও বাচিকশিল্পী সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাপাঠ ও কথোপকথন। তবে তার আগে সারাদিন ধরে আরও নানা ধারার শিল্পীদের আয়োজনে মুখরিত হয়ে উঠেছিল ‘ভেরিটাস ২০২২’। সুদূর নদীয়ার গোরভাঙা থেকে এসেছিলেন আরমান ফকির। লোকগানের সেই রেশ ধরেই সঙ্গীত পরিবেশন করলেন শুভাশিস দাসশর্মা। আবার একই মঞ্চে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁদের নাট্য-প্রদর্শনী নিয়ে। সুন্দরবনের লোকদেবী বনবিবির পালা মঞ্চস্থ করলেন ‘ডেল্টা লাইভস’-এর শিল্পীরা। ‘ডেল্টা লাইভস’-এর প্রোজেক্ট লিড বর্ণমালা রায় শোনালেন সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার কথা। আবার এসবের মধ্যেই কলকাতার বাংলা গানের ব্যান্ড ‘স্বরবর্ণ’-ও হাজির ছিল তাদের নতুন-পুরনো নানা গানের আয়োজন নিয়ে। আবার একইসঙ্গে নানা ধরনের হাতের কাজ ও অন্যান্য শিল্পকর্ম নিয়ে হাজির ছিলেন ‘নকশ দ্য লেবেল’ এবং ‘ব্র্যান্ড হেমলাইন’-এর শিল্পীরা।
আরও পড়ুন
গানের ও পাঠের মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্রযাপনের সন্ধান, ‘কারু’ ও একটি ফেলে-আসা সন্ধ্যা
আরও পড়ুন
দেবেশ রায়ের বই ও একটি 'কেতাব-ই' সন্ধ্যা
গান, ছবি থেকে শুরু করে লোকজীবনের নানা আঙ্গিক নিয়ে এই উৎসব মুখরতার মধ্যেই ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছিল দিনটা। মাঝে মাঝে অবশ্য খাওয়া-দাওয়ার জন্য কিছু বিরতিও নিতে হয়েছে। এভাবেই একসময় সন্ধে নেমে এল। আর তখনই অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে সকলে ফিরে গেলেন মূল উপলক্ষ্যে। সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে উন্মোচিত হল ‘Transবাদ’ বইটির মোড়ক। এই বইটি থেকে যেমন কয়েকটি কবিতা পাঠ করে শোনালেন তিনি, তেমনই তার সূত্র ধরে বাংলা ও ইংরেজি ভাষার আরও নানা কবিতাও পড়লেন তিনি। কথাসূত্রে উঠে এল প্রয়াত কবি শঙ্খ ঘোষের স্মৃতির কথাও।
আরও পড়ুন
গায়ত্রী-আলাপনের বইপ্রকাশ, ব্যতিক্রমী সন্ধ্যার সাক্ষী কলকাতা
একটি বই প্রকাশকে কেন্দ্র করে নানা ধারার শিল্পীদের এই মেলবন্ধন সচরাচর চোখে পড়ে না। সেই দিক থেকেই ব্যতিক্রমী হয়ে থাকল ‘ভেরিটাস ২০২২’। রন্তিদেব বলছিলেন, “বই প্রকাশের মঞ্চ থেকে আমরা যেমন আমাদের বইয়ের প্রচার করলাম, আমরা চেয়েছিলাম অন্যান্য শিল্পীরাও যেন তাঁদের শিল্পের প্রচারের একটা জায়গা পান। কারণ কোনো শিল্প মাধ্যমই একা পূর্ণতা পেতে পারে না।” একদিনের এই অনুষ্ঠান থেকে সেই সমন্বয়ের বার্তাই যেন দিতে চাইলেন তাঁরা। এই হয়তো এক পথচলার শুরু। হাতে হাত রেখে এখনও অনেকটা এগিয়ে যাওয়া বাকি।
Powered by Froala Editor