পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উন্নত জীব প্রজাতি মানুষ। তার কাছে অসম্ভব নয় কোনো কিছুই। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের অন্য সমস্ত প্রজাতির ওপরেই একছত্র বিন্যাস তার। অবস্থান জীব-পিরামিডের শীর্ষবিন্দুতে। কিন্তু এই সমীকরণটাই যদি উল্টে যায় হঠাৎ করে? কোনো বৃহত্তর বা উন্নত প্রজাতির প্রাণীর সঙ্গে সংঘাত লাগে মানব সভ্যতার?
কল্পবিজ্ঞানের সিনেমা, উপন্যাস কিংবা গল্পে অনেকক্ষেত্রেই দেখানো হয়েছে এমন দৃশ্য। বিজ্ঞান ও শিল্পের পরিভাষায় এই সারিয়াল প্রেক্ষাপটকে বলা হয় অ্যানথ্রোপসেন্ট্রিসিটি (Anthropocentricity)। যার আক্ষরিক অর্থ, মানব সভ্যতাকে, মানবক মূল্যবোধকে পাশে সরিয়ে রেখে এই বাস্তবতার মূল্যায়ন। এবার বিশ্ববিখ্যাত ‘ভেনিস বায়েনালে’ (Venice Biennale) প্রদর্শনীতে উঠে এল পরাবাস্তবের এই দিকটাই। আদিকাল থেকে প্রকৃতির বুকে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে মানব সভ্যতা। মানুষের জন্য পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেছে হাজারো প্রজাতি। এবার এই ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে অ্যানথ্রোপসেন্ট্রিক চিত্রকলার দিকেই ঝুঁকলেন শিল্পীরা।
গত ২৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছিল ‘ভেনিস বায়েনালে’ প্রদর্শনী। চলতি বছরে ১২৭তম বর্ষে পা দিল কিংবদন্তি এই শিল্প প্রদর্শনী উৎসবটি। ইউরোপ ও আমেরিকার উন্নত দেশগুলি ছাড়াও ক্যামারুন, নামিবিয়া, নেপাল, ওমানের মতো অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া দেশের শিল্পীদেরও সমানভাবে জায়গা করে দেওয়া হল এই চিত্র প্রদর্শনীতে। সবমিলিয়ে ৫৮টি দেশের ২২৩ জন শিল্পী অংশ নিয়েছিলেন এই প্রতিযোগিতায়। এবং, তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশই মহিলা। এমন নজির বায়েনালের ইতিহাসে এই প্রথম।
১৮৯৫ সালে প্রচলিত হওয়া এই প্রদর্শনী নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। বার বার এই প্রদর্শনীর মঞ্চ হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, কখনও আবার মানবিক মিলনক্ষেত্র। এই প্রদর্শনীতেই যেমন প্রথম ‘সম্পর্ক’ গড়ে উঠেছিল হিটলার ও মুসোলিনির, তেমনই এই প্রদর্শনীই আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ফুটিয়ে তুলেছিল নাৎসি শাসনের ভয়াবহতা। এবারও প্রাণীজগতের ওপর মানুষের আগ্রাসনের নেতিবাচক দিকগুলিলেই ফুটিয়ে তুলল বায়েনালে।
আরও পড়ুন
বাদ্যযন্ত্রের বদলে বন্দুক তুলে নিচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ফামো শিল্পীরা
বিপন্নপ্রায় প্রাণীর তালিকায় তিমি, রেনডিয়ার-সহ নানান প্রজাতির নাম নথিভুক্ত হওয়া থেকে শুরু করে গণঅবলুপ্তি— প্রতিটা আঙ্গিকেই নানাভাবে শিল্পকর্মে ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পীরা। সেইসঙ্গে একাধিক মিথ ও মাইথোলজির ছাপও সুস্পষ্ট গোটা প্রদর্শনীজুড়ে। মোবি ডিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রাচীন জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিতে মানুষ ও বন্যপ্রাণীদের সম্পর্ককে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ক্যানভাস, ভাস্কর্য এবং ডিজিটাল আর্টের মাধ্যমে। সবমিলিয়ে এই প্রদর্শনীতে পা দিলেই মনে হবে এ যেন এক পরাবাস্তব জগৎ, যেখানে জীব-পিরামিডের শীর্ষে নয় বরং অন্যান্য প্রাণীদের সঙ্গে আনুভূমিক তলেই বিরাজ করছে মানুষ…
আরও পড়ুন
জিআই ট্যাগ পেল কাশ্মীরের কার্পেট, ভাগ্য বদলাবে শিল্পীদের?
Powered by Froala Editor