করোনা ভাইরাসের আক্রমণে সমস্ত পৃথিবী জুড়েই আতঙ্কের সঞ্চার হয়েছে। কিন্তু অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় সতর্কতাও ডেকে আনতে পারে নতুন বিপদ। ঠিক তেমনটাই ঘটেছে দক্ষিণ আমেরিকার ভেনেজুয়েলায়। করোনা ভাইরাস সেভাবে থাবা বসাতে পারেনি সেদেশে। কিন্তু লকডাউনের জেরে অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে একেবারেই। সারা দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে খাদ্যসংকট। আর এমন পরিস্থিতিতে গবাদি পশুর রক্ত খেয়েই বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কয়েক লক্ষ মানুষ।
ভেনেজুয়েলার পশ্চিমদিকের একটি শহর সান ক্রিস্টোবাল। কিছুদিন হল শহরের বুকে দেখা যাচ্ছে এক অদ্ভুত দৃশ্য। খাবারের সন্ধানে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বহু মানুষ। অবশ্য খাবার বললে একটু ভুল হবে। কারণ সেখানে লাইন দিয়ে মানুষ সংগ্রহ করছে গবাদি পশুর রক্ত। মানুষের অভিযোগ, সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্বেও রেশনের খাবার এসে পৌঁছয়নি। আর এমন পরিস্থিতিতে গবাদি পশুর রক্তই তাদের প্রোটিনের উৎস।
কলম্বিয়া ও ভেনেজুয়েলা অঞ্চলের একটি অতি প্রাচীন খাবার পিচন স্যুপ। আর এই খাবারের অতি প্রয়োজনীয় উপাদান গবাদি পশুর রক্ত। কিন্তু এই করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ যে খুশি হয়ে এই খাবার খাচ্ছেন, সে-কথা মনে করার কোনো কারণ নেই। মাংসের দাম যেখানে একটি পরিবারের মাসিক আয়ের দ্বিগুণ, সেখানে বিকল্প কোনো খাদ্যের অভাবেই এই অস্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে ঝুঁকছেন মানুষ।
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই ক্রমশ ক্ষতির মুখে পড়েছে ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি। গত ৬ বছরে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির সাক্ষী থেকেছে দেশ। আর এই দুর্দশাকেই অন্তিম সীমানায় পৌঁছে দিয়েছে লকডাউন। যদিও সেদেশে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা মাত্র ৪৪০। এখনও অবধি মারা গিয়েছেন মাত্র ১০ জন। অতএব লকডাউনের কড়াকড়িতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা মাথায় না রেখে সরকার যে আসলে নির্বুদ্ধিতার পরিচয় রেখেছে, এমনটা মনে করছেন অনেকেই। আর তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। দেশের ৩ কোটি মানুষের মধ্যে ৯৩ লক্ষ মানুষ প্রবলভাবে দারিদ্রের শিকার। এমনকি জীবিকার সন্ধানে ভিনদেশে পাড়ি দিয়েছেন ৫০ লক্ষ মানুষ। জাতিপুঞ্জের মতে এই ঘটনা চলতি বছরের অন্যতম প্রধান মানবিক সঙ্কটগুলির একটি। ভেনেজুয়েলা কি এই সঙ্কট থেকে মুক্তি পাবে? এখন নজর সেদিকেই।
ছবি ঋণ - রয়টার্স