দেশ ছেড়েও পরিত্রাণ নেই, চিলিতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ভেনেজুয়েলার শরণার্থীরা

বিগত কয়েক বছর ধরেই টালমাটাল পরিস্থিতি ভেনেজুয়েলায় (Venezuela)। এক কথায় যেন রাষ্ট্রপতিত্ব ছাড়তে নারাজ প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। অন্যদিকে বিরোধী দলনেতা হুয়ান গুইয়াদো’র নেতৃত্বে ক্রমশ চলছে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ। দাবি, স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়ার। ভেনেজুয়েলার এই সংকট নিয়ে বিভক্ত গোটা বিশ্ব। কেউ সমর্থন করছে ক্ষমতাশীল রাষ্ট্রপ্রধানকে। কেউ আবার বিপক্ষ দলের সমর্থক। অথচ, এই সমীকরণের কাটাকুটিতে বাস্তুচ্যুত (Refugee) হচ্ছেন হাজার হাজার ভেনেজুয়েলান মানুষ। দেশ ছাড়ার পর তাঁদের টিকে থাকা যেন আরও কঠিন হয়ে উঠছে দিনে দিনে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিগত দু’বছরই গোটা বিশ্বের মধ্যে শরণার্থী সমস্যায় জর্জরিত দেশগুলির মধ্যে সিরিয়ার পরেই দ্বিতীয় স্থানে ছিল ল্যাটিন আমেরিকার দেশটি। শুধু ২০২০ সালেই ভেনেজুয়েলা ছেড়েছেন ৩৭ লক্ষ মানুষ। আর তার অন্যতম কারণ হচ্ছে ধ্বসে পড়ে অর্থনীতি। একটা সময় পর্যন্ত ভেনেজুয়েলার আর্থিক উপার্জন যোগাত খনিজ তেলের ভাণ্ডার। আর উৎপাদিত তেলের ৪০ শতাংশই কিনত যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ভেনেজুয়েলার ওপর। ছিন্ন করেন বাণিজ্যিক সম্পর্ক। তারপর থেকেই ধাক্কা খেয়েছে দেশটির অর্থনীতি। অন্যান্য ক্ষেত্রেও কমেছে উৎপাদন। ফলে রাজনৈতিক সংঘাত ছাড়াও, ভেনেজুয়েলানদের কাছে মূল্যবৃদ্ধি অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশ ছাড়ার। 

কিন্তু কোথায় যাচ্ছেন তাঁরা? হিসেব বলছে মূলত কলোম্বিয়া এবং চিলিই হয়ে উঠেছে তাঁদের গন্তব্য। কিন্তু সকলের ভাগ্যে আইনত আশ্রয় জুটছে, এমনটা নয় একেবারেই। বিশেষত, চিলিতে আশ্রয়দানের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া অত্যন্ত মন্থর হওয়ায় খোলা আকাশের নিচেই দিন কাটাতে হচ্ছে হাজার হাজার শরণার্থীদের। কারোর আবার ‘কাগজ’ মিললেও আশ্রয়কেন্দ্র মেলেনি কোনো। শহরের বড়ো জনপদগুলো তো বটেই, সমুদ্র সৈকত, জঙ্গল কিংবা ফাঁকা মাঠে তাঁবু খাটিয়েই দিন গুজরান করছেন ভেনেজুয়েলানরা।

তবে সকলে যে গন্তব্যে পৌঁছে উঠতে পারছেন এমনটাও নয়। ভেনেজুয়েলা থেকে চিলি যাওয়ার সমস্ত রাস্তাই যে বন্ধ করে রেখেছে প্রশাসন। অবৈধভাবে জঙ্গল কিংবা গিরিপথের মধ্যে দিয়েই পরিত্রাণের পথ খুঁজছেন শরণার্থীরা। কিন্তু প্রায় দেড় হাজার মাইল অতিক্রম করা তো মুখের কথা নয়। চরম আবহাওয়া, খাদ্য এবং পানীয়ের অভাব, হিংস্র পশুর আক্রমণে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই। শুধু গত মাসেই চরম আবহাওয়ার শিকার হয়েছেন ১৮ জন শরনার্থী। যাঁরা পৌঁছাতে পারছেন চিলির শহরগুলিতে, তাঁদের যে ভাগ্য ফিরছে এমনটাও না। শহরের পরিচ্ছন্ন নষ্ট করা এবং অপরাধ বৃদ্ধির অভিযোগে একাধিকবার হিংসার শিকার হতে হচ্ছে তাঁদের। চলতি মাসে চিলির ইকুইক শহরে ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল গণবিক্ষোভ। অবৈধ শরণার্থীদের ব্যক্তিগত সামগ্রী, তাঁবু, জামাকাপড়-সহ বিভিন্ন জিনিসই পুড়িয়ে ফেলা হয় আগুনে। কেড়ে নেওয়া হয় শেষ সম্বলটুকুও। এই রোষ, হিংস্রতা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে অন্যত্রও। কোথায় এর শেষ? কী ব্যবস্থাই বা নেবে সংশ্লিষ্ট দেশটির প্রশাসন? জানা নেই উত্তর…

Powered by Froala Editor

Latest News See More