খাদ্যতালিকায় গরহাজির মাছ, মাংস, ডিম এমনকি দুধ, মধুও। হ্যাঁ, ভেগানদের ডায়েটচার্ট ঠিক এরকমই। বিশ্বাস, কোনো না কোনোভাবে এই খাদ্যের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাণ। তার মধ্যে মিশে রয়েছে মানুষের নিষ্ঠুরতা। আর নিষ্ঠুরতার প্রসঙ্গ যদি আসেই, তবে তো পাশে সরিয়ে রাখতে হয় সমস্ত প্রাণিজ সম্পদকেও। হ্যাঁ, সেই পথেই হাঁটেন ভেগানরা। উলের পোশাক থেকে শুরু করে লেদার— সবেতেই ‘না’ তাঁদের। এবার তাঁদের জন্যই বাজারে এল ভেগান লেদার (Vegan Leather)!
চামড়া, অথচ চামড়া নয়। নিশ্চয়ই ভাবছেন, হেঁয়ালি করা হচ্ছে বুঝি? কিন্তু আদতে এমনটাই করে দেখালো একটি মার্কিন সংস্থা। মাশরুম থেকেই বানিয়ে ফেলল লেদার। সেই কৃত্রিম চামড়া ছুঁয়ে কিংবা ব্যবহার করে বোঝার উপায় নেই যে সেটা তৈরি হয়েছে ছত্রাক থেকে। এমনকি তার ঘ্রাণও হুবহু আসল চামড়ার মতোই। সম্প্রতি মার্কিন বাণিজ্যিক পত্রিকা ‘ফাস্ট কোম্পানি’-তে প্রকাশিত এই রিপোর্টই বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে বাণিজ্যজগতে।
কিন্তু কীভাবে তৈরি হল এই নকল চামড়া? গবেষকরা জানাচ্ছেন, মাশরুমের মূল সংগ্রহ করে তাতে রাসায়নিকের সংযোজনে তৈরি করা হয়েছে এই কৃত্রিম লেদার। মাইসেলিয়াম থেকে তৈরি হওয়ায় এই অভিনব চামড়ার নামকরণ করা হয়েছে ‘মাইলো’। কৃত্রিম এই লেদারের মূল উপাদান উৎপাদনের পর, তার ওপরে চাপানো হয়েছে আসল লেদারের টেক্সচারও। ফলত, দেখে কিংবা স্পর্শ করে বোঝার উপায় নেই যে এই চামড়া প্রাণীজ নয়। তবে শুধু লেদারই নয়, একই পদ্ধতিতে কৃত্রিম প্রাণীজ তন্তুও তৈরি করছে মার্কিন সংস্থাটি।
‘ফাস্ট কোম্পানি’-র রিপোর্ট অনুযায়ী আগামী বছরেই বাজারে চলে আসবে এই অভিনব লেদার। ইতিমধ্যেই, এই লেদার দিয়ে ৫০০০ হাজারেরও বেশি সামগ্রী তৈরি করে ফেলেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি। তবে তা পাইলট প্রোজেক্টের অংশ। সেইসব সামগ্রী নমুনা হিসাবে পাঠানো হয়েছে অ্যাডিডাস, নাইকি, লুলুলেমনের মতো বহুজাতিক সংস্থায়। এমনকি লুলুলেমন এই নকল লেদার দিয়ে যোগা ম্যাট তৈরিতেও বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে শুরু থেকেই।
তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিক কোম্পানি ভেগান লেদার এনেছে বাজারে। তাদের কোনোটা তৈরি ক্যাকটাস থেকে, কোনোটা আবার গাছের ছাল থেকে। তবে সে লেদারের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই গেছে। এবার সেই জায়গাটাতেই মাইলো বাজিমাত করবে বলেই মনে করছেন গবেষকরা…
Powered by Froala Editor