দেশজুড়ে নিরন্তর বেড়ে চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিনই দৈনিক সংক্রমণে রেকর্ড গড়ছে ভারত। পশ্চিমবঙ্গেও করোনার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৬ হাজার মানুষ। মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গের এই আঘাতের জন্য প্রথম থেকেই দায়ী করা হচ্ছিল ‘ডবল মিউট্যান্ট’ করোনাভাইরাসকে। তবে সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে অতিসংক্রামক আরও একটি মিউটেশনের কথা। ‘বেঙ্গল স্ট্রেন’। গবেষকরা দাবি করছেন, তিনবার মিউটেশন করে কার্যত অপ্রতিরোধ্য এই ভাইরাল স্ট্রেনটি।
গবেষণা জানাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র ভারতেই পাওয়া গেছে সব মিলিয়ে সাত সহস্রাধিক করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট। যার মধ্যে দ্বিতীয় তরঙ্গের জন্য দায়ী মূলত তিনটি ভ্যারিয়েন্ট। এখন প্রশ্ন থেকে যায়, করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্ট বা মিউট্যান্ট বিষয়টি আসলে কী? আসলে প্রকৃতির নিয়মানুযায়ীই প্রতিটি ভাইরাস নিজেদের প্রতিলিপি গঠন করতে থাকে অবিরত। তবে সবসময় হুবহু একই প্রতিলিপি তৈরি করে না তারা। অন্যান্য জীবের মতোই পরিপার্শ্বের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে বদলে ফেলে আরএনএ কিংবা অন্যান্য চরিত্র। সহজ ভাষায়, এও এক অভিযোজন। আর তার ফলেই তৈরি হয় নতুন স্ট্রেন।
ভাইরাসের এই ক্রমরূপান্তরের জেরেই বর্তমানে কঠিনতম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। গত অক্টোবর মাসেই প্রথম সন্ধান মিলেছিল ‘ডবল মিউট্যান্ট’ স্ট্রেনের। বি.১.৬১৭ নামের স্ট্রেনটি তৈরি হয়েছিল ব্রিটেন ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশনের মাধ্যমে। স্পাইক প্রোটিনের অ্যামাইনো অ্যাসিড সেখানে বদলে গিয়েছিল ‘গ্লুটামাইন’-এ। পরবর্তীকালে আরও একবার বদল হয় তার। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিল স্ট্রেনের মিউটেশনের সংযুক্ত প্রভাব ঘাতক করে তোলে ভাইরাসটিকে। বি.১.৬১৮ নামের এই স্ট্রেনটির সর্বপ্রথম অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল বাংলা এবং মহারাষ্ট্রে। তবে বিগত কয়েকমাসে মূলত বাংলাতেই এর প্রকোপ বেশি দেখা যাওয়ায় এটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বেঙ্গল স্ট্রেন’ হিসাবে।
তবে শুধু ভারতেই নয়, গত ২২ এপ্রিল সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রেও পাওয়া গিয়েছে স্ট্রেনটির অস্তিত্ব। কিন্তু কেন ভয়ঙ্কর এই স্ট্রেনটি? গবেষণা দেখাচ্ছে, ‘ডবল মিউট্যান্ট’ ভাইরাসের ‘এল৪৫২আর’ অভিযোজনের জন্য ভাইরাসটি অনায়াসেই দেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার চোখ এড়িয়ে বাসা বাঁধতে পারত দেহে। পাশাপাশি এর সংক্রমণ ক্ষমতা ছিল স্বাভাবিকের থেকে বেশি। অন্যদিকে ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট’ অভিযোজনে সম্পূর্ণ ভাবে সে মুছে ফেলেছে স্পাইক প্রোটিনের দু-দুটি উপাদান। ‘এইচ১৪৬ডেল’ এবং ‘ওয়াই১৪৫ডেল’— এই দুই মিউটেশনে কারণে এখন আরও শক্তিশালী সে। স্পাইক প্রোটিনের অনুপস্থিতির কারণে এই ভাইরাসকে চিহ্নিত করতে পারে না আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এমনকি পূর্বে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিরা অথবা টিকাকরণ হয়ে গেছে, এমন ব্যক্তিরাও নিরাপদ নন ভাইরাসটি থেকে। কারণ, শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি থাকলেও, স্পাইক প্রোটিনের সংস্পর্শে না আসায় সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থেকে যায় তারা। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘ইমিউন এস্কেপ’।
আরও পড়ুন
ইজরায়েলে একদিনে করোনায় মৃতের সংখ্যা শূন্য, ১০ মাসে প্রথম
করোনার স্বাভাবিক ভারতীয় স্ট্রেনের পাশাপাশি এই দুটি স্ট্রেনের বাড়বাড়ন্তই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসকদের কাছে। বর্তমানে ভারতে ‘ডবল মিউট্যান্ট’-এর অস্তিত্বের হার প্রায় ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে বাড়তে বাড়তে ১২ শতাংশের কাছে পৌঁছেছে ‘বেঙ্গল স্ট্রেন’-এর প্রবণতা। আর এই দুটি স্ট্রেনেরই সম্পূর্ণ চরিত্র বুঝতে এখনও অপারগ বিজ্ঞানীরা। ফলত, খুব সহজে নিস্তার নেই মানবসভ্যতার। শুধুমাত্র চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর জোরদার করেই একমাত্র রুখে দেওয়া যেতে পারে পরিস্থিতিকে…
আরও পড়ুন
করোনায় প্রয়াত মানবতাবাদী নেতা মৌলানা ওয়াহিউদ্দিন খান
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
তাঁদের সুরেই অভিষেক কুমার শানুর, করোনায় ছিন্ন নাদিম-শ্রাবণ জুটি