বৃহস্পতিবার থেকে খুলছে সিনেমা হল ও মঞ্চ, কী ভাবছেন সংস্কৃতি জগতের কলাকুশলীরা?

“নিঃসন্দেহে খুশির খবর। এতদিন পর আবার আমরা নিজেদের নিজেদের কাজে ফিরতে পারব। এর থেকে ভালো খবর আর কীই বা হতে পারে?” ঠিক এভাবেই প্রথম প্রতিক্রিয়া জানালেন চলচ্চিত্র সম্পাদক অনির্বাণ মাইতি এবং পরিচালক উজ্জ্বল বসু। সত্যিই এক খুশির হাওয়া ঘিরে ধরেছে সিনেমা-নাটক-গান সহ সংস্কৃতি জগতের সমস্ত মানুষকে। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ১ অক্টোবর থেকেই শুরু হতে পারে সমস্ত সিনেমাহল এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে অবশ্যই নির্দিষ্ট কোভিড প্রোটোকল মেনে। আর এই প্রোটোকল অনুযায়ী সিনেমা হলে একটি শো-তে ৫০ জনের বেশি দর্শক ঢুকতে পারবেন না। অন্যান্য অনুষ্ঠানেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তাছাড়া কোনো অনুষ্ঠানেই ৫০ জনের বেশি কলাকুশলী অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

এভাবে দর্শকসংখ্যা বেঁধে দেওয়া নিয়ে কিন্তু মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল শিল্পীদের মধ্যে। পরিচালক গৌতম ঘোষের কথায়, “এত অল্প সংখ্যক দর্শক নিয়ে হয়তো অনেক হল-মালিক সিনেমার প্রদর্শন করাতে চাইবেন না।” অন্যদিকে অনির্বাণ মাইতির মতে, “স্ট্রাগলিং ডিরেক্টরদের ক্ষেত্রে সপ্তাহের কাজের দিনে ৫০ জনের বেশি দর্শক বড়ো একটা হয় না। ছুটির দিনে সংখ্যা কিছুটা বেশি হয়। তবে সেক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে যে ছুটির দিনগুলিতে যেন বেশি শো করা যায়।” আবার নবাগত সঙ্গীতশিল্পী অনন্যা চক্রবর্তী মনে করছেন, “দর্শকসংখার থেকে বড় বিষয় দর্শকদের সামনে দাঁড়িয়ে গান গাওয়ার সুযোগ পাব আবার। একজন শিল্পীর কাছে এই অভাবটা কতটা সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।” তবে সব মিলিয়ে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজোর ঠিক আগেই এই ঘোষণায় খুশি সকলেই।

আসলে লাইভ স্ট্রিমিং বা অনলাইন স্ক্রিনিং, কোনোটাই যেন ঠিক বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি। পরিচালক গৌতম ঘোষের কথায়, “প্রথমেই একটা সিনেমা মানুষ হলে না দেখে বাড়িতে বসে দেখবে, এটা ঠিক মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমার ‘রাহগির’ তো তৈরি হয়েই পড়ে আছে। কিন্তু আমি ওটিটি-তে রিলিজ করার কথা ভাবিনি। আগে মানুষ সিনেমা হলে দেখুক, তারপর অন্যভাবে ভাবা যাবে।” আবার পরিচালক উজ্জ্বল বসুর মতে, “ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য যেটা তৈরি হয় সেটা আলাদা, সিনেমা হলের জন্য যেটা তৈরি হয় সেটা আলাদা। দুটোর নির্মাণশৈলী আলাদা। ওটিটি কখনও সিনেমা হলের বিকল্প হতে পারে না।” 

তবে সীমিত দর্শকসংখ্যা নিয়ে কীভাবে হলগুলো চলবে, সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যায়। গৌতম ঘোষের কথায়, “দেখাই যাক না ভবিষ্যত কীভাবে এগোয়। মার্চ-এপ্রিল মাসে তো কেউ ভাবতে পারিনি এই মহামারী এতোদিন ধরে চলবে। ১০০ বছর আগেও ইউরোপে স্প্যানিশ ফ্লু-র প্রকোপে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি চরম ক্ষতির মুখে পড়েছিল। তখন আর্থিক সংস্থান আরও খারাপ ছিল। তবু তো ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে। এবারেও ঘুরে দাঁড়ানো যাবে। এখানেই শেষ নয়।” সঙ্গীতশিল্পী গৌরব সরকার অবশ্য বলছেন, “মঞ্চে অনুষ্ঠান যেমন থেকে যাবে, তেমনই থেকে যাবে অনলাইন স্ট্রিমিং-ও। এই মহামারী পরিস্থিতিতে সেই ধারা খানিকটা গতি পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু মহামারী শেষ হয়ে গেলে তার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাবে, এমনটা নয়।”

কিন্তু গৌরবের কথায়, “মঞ্চের অনুষ্ঠান শুধু শিল্পী আর দর্শকের মধ্যেই তো আটকে থাকে না। সেই অনুষ্ঠানের সময় যাঁরা বাদাম বিক্রি করেন, অনুষ্ঠান তাঁদেরও। এতদিন এই সম্পর্কের জায়গাটাই ছিল না। এবার ধীরে ধীরে সেই সম্পর্ক গড়ে উঠলে খুশি না হয়ে উপায় নেই।” হ্যাঁ, সংস্কৃতি কারোর কারোর কাছে জীবিকার প্রশ্নও তো বটে। সিনেমা থেকে গান সর্বত্র একটা শিল্প গড়ে ওঠে অসংখ্য মানুষের মিলিত উদ্যোগে। কিন্তু সেই ডার্করুম থেকে ব্যাকস্টেজ এমনকি সেইসব বাদাম-বিক্রেতা, সবাই রোজগার হারিয়ে বসে ছিলেন এতদিন। অন্যান্য ব্যবসায়িক ক্ষেত্র তো আগেই খুলে গিয়েছে। এবার সংস্কৃতি জগত হয়তো প্রাণ ফিরে পাবে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আবার সেই পুরনো মেজাজে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে কিনা, জানেন না কেউই। কিন্তু বেঁচে থাকাই যেখানে সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন, সেখানে প্রোটোকল মেনে চলতে আপত্তি নেই কারোরই। ভবিষ্যত এখনও অনিশ্চিত ঠিকই, কিন্তু অন্ধকার নয়।

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More