পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বকালীন সেরা চিত্রকারদের তালিকায় প্রথম সারিতেই থাকে ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের নাম। জীবদ্দশায় সেভাবে গুরুত্ব না পেলেও, মৃত্যুর পরে গোটা বিশ্বজুড়েই সমাদৃত হয়েছেন হয়েছে ভ্যান গঘের কাজ। বিশেষত তাঁর আঁকা ‘স্টারি নাইট’ (The Starry Night) ছবিটি আজকের দিনে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয়তা শিল্পকর্ম। তবে ফ্রান্সের প্রান্তিক অঞ্চলে অবস্থিত অ্যাসাইলামের ছোট্ট ঘরে বসে আঁকা এই ছবিটার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ভারতবর্ষও (India)।
হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই সত্যি। ভ্যান গঘের ‘দ্য স্টারি নাইট’-এ রয়েছে ভারতের ছাপ। মূলত, এই মাস্টারপিসে যে হলুদ রঙ ব্যবহার করেছিলেন কিংবদন্তি শিল্পী, তার উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতবর্ষ।
পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় দেড়শো বছর। সময়টা উনিশ শতকের শেষের দিক। বিহারের মুঙ্গের শহরে তখন তৈরি হত এই বিশেষ রং। যা তৎকালীন দুনিয়ায় পরিচিত ছিল ‘ইন্ডিয়ান ইয়েলো’ নামে। এক ডাচ শিল্পী ও উদ্যোগপতিই সেসময় এই রং-এর প্রচলন ঘটান ইউরোপের বাজারে। কিন্তু শতাব্দীপ্রাচীন এই রহস্য সামনে এল কীভাবে?
এই ইতিহাসের অনুসন্ধান করে গেলে, বুঝতে হবে এই রঙের প্রকৃতিও। মূলত এই রং তৈরি হত গোমূত্র দিয়ে। উনিশ শতকের মুঙ্গের শহর তখন ডুবে আছে দারিদ্রে। গবাদি পশুদের খাদ্য জোটানোর সামর্থ্যও ছিল না সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষদের। ফলত, বাধ্য হয়েই খড়ের বদলে কাঁচা আম পাতা খেতে দেওয়া হত তাদের। যার স্পষ্ট প্রভাব পড়ত গোমূত্রে। গাঢ় হলুদাভ বর্ণের সেই মূত্রকে ফুটিয়েই তৈরি হল হলুদ রং। চিনামাটির পাত্রে ছেঁকে নেওয়া হত ‘পিউরি’ নামের রঞ্জক। তারপর স্বল্পমূল্যে তা কিনে বিদেশে চড়াদামে বিক্রি করতেন শিল্পপতিরা।
আরও পড়ুন
ভ্যান গঘের আঁকা দুষ্প্রাপ্য ছবি, এই প্রথম প্রকাশ্যে
১৮৮২ সালে লন্ডন সোসাইটি অফ আর্টসের এক প্রতিবেদনে এই বিশেষ রঙের কথা উল্লেখ করেন এক বাঙালি সরকারি কর্মচারী টিএন মুখার্জ্জী। তাঁর এই প্রতিবেদন প্রকাশ পাওয়ার পরই বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছিল বিশ্বজুড়ে। ফলস্বরূপ বিশ শতকের শুরুতেই বন্ধ হয়ে যায় এই রঙের উৎপাদন। পরবর্তীতে ভ্যান গঘের ছবির বিশ্লেষণে দেখা যায়, তাঁর ব্যবহৃত অধিকাংশ হলুদ রঙের মধ্যেই উপস্থিত রয়েছে ইউরিয়া। তার অন্যথা হয়নি স্টারি নাইটেও। তবে সুদূর ফ্রান্সের ডাচ শিল্পীর ছবিতে এভাবে ভারতের যোগ রয়েছে, ক’জনই বা খোঁজ রেখেছেন তার?
Powered by Froala Editor