‘মোনা লিস’ এবং ‘দ্য লাস্ট সাপার’— এই দুটি ছবিই অমর করে রেখেছে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিকে। তবে তাছাড়াও নিজের আঁকা বহু ছবি তিনি ধ্বংস করেছিলেন স্বয়ং। হাতুড়ির বাড়ি মেরে নিজের সেরা শিল্পকর্ম ডেভিডের পা ভেঙে দিতে বসেছিলেন আরেক কিংবদন্তি শিল্পী মিকেলঅ্যাঞ্জোলো। শিল্পীরা বোধ হয় এমনই হন। এবার এই তালিকায় যুক্ত হল আরও এক বিশ্ববরেণ্য চিত্রকরের নাম। ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ। নিজের আঁকা আত্ম-প্রতিকৃতিই তিনি লুকিয়ে রেখেছিলেন অন্য একটি ছবির নিচে!
‘হেড অফ আ পিজেন্ট উইম্যান’। ভ্যান গঘের ছবির ব্যাপারে যাঁদের আগ্রহ রয়েছে, নাম শুনে বুঝতে না পারলেও এ-ছবি দেখলেই চিনতে পারবেন তাঁরা। ১৮৮৫ সালে ভ্যান গঘের আঁকা এই ছবিটি প্রথম প্রকাশ্যে এসেছিল তাঁর ভাই থিও-র হাত ধরে। ভ্যান গঘের জীবদ্দশায় বিক্রি হওয়া প্রথম ছবিগুলির মধ্যে এটি অন্যতমও বটে। আর এই ছবির নিচেই একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে লুকিয়ে ছিল ভ্যান গঘের সেলফ-পোর্ট্রেট! কিন্তু কীভাবে সন্ধান মিলল এই ছবির?
সম্প্রতি ইউরোপে আয়োজিত হতে চলা একটি চিত্র প্রদর্শনীতে নথিভুক্ত করা হয়েছিল ভ্যান গঘের ‘হেড অফ আ পিজেন্ট উইম্যান’ ছবিটি। প্রদর্শনীতে পাঠানোর আগে ছবিটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন ন্যাশনাল গ্যালারি অফ স্কটল্যান্ডের আধিকারিকরা। ব্যবহার করা হয়েছিল এক্স-রে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির। আর তাতেই যবনিকা পতন হয় এই রহস্যের।
এক্স-রে ও থার্মাল স্ক্যানিং-এ উঠে আসে মোট দুটি রঙের প্রলেপ রয়েছে ছবিটিতে। একটি ক্যানভাসের ওপরে, রঙের অন্য স্তরটি রয়েছে ক্যানভাসের পিছনে আঠা দিয়ে আটকে রাখা কার্ডবোর্ডের ওপর। হ্যাঁ, নিজের সেলফ পোর্ট্রেটটি প্রথমে কার্ডবোর্ডের ওপরেই এঁকেছিলেন ভ্যান গঘ। তারপর আঠা দিয়ে তার উপর আটকে দিয়েছিলেন ‘পিজেন্ট উইম্যান’-এর ছবি। কিন্তু ভ্যান গঘের এহেন কর্মকাণ্ডের কারণ কী? তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন গবেষকরা।
তবে ভ্যান গঘের আত্ম-প্রতিকৃতির স্ক্যান প্রকাশ্যে এলেও, আসল ছবিটি আদৌ উদ্ধার করা যাবে কিনা তা নিয়ে এখনও ধন্দে রয়েছেন কিউরেটর রা। ফরাসি কিউরেটর ফ্রান্সেস ফাউলের মতে, নিচের ছবিটিকে উদ্ধার করতে গেলে ‘পিজেন্ট উইম্যান’ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে এই আবিষ্কার যে বিরলতম, তা নিয়ে সন্দেহ নেই কোনো।
ফ্রান্সেস জানাচ্ছেন, ‘পিজেন্ট উইম্যান’ ছবিটি ১৯০৫ সাল পর্যন্ত ছিল ফ্রান্সেই। তারপর তা পাঠানো হয় নেদারল্যান্ডসের একটি মিউজিয়ামে। এরপর সে-দেশে একাধিকবার হাত বদল হয়ে ১৯৫১ সালে স্কটল্যান্ড গিয়ে পৌঁছায় এই ছবিটি। প্রায় দশ বছর এক স্কটিশ আইনজীবীর কাছেই সংরক্ষিত ছিল ‘পিজেন্ট উইম্যান’। ১৯৬০ সালে স্কটিশ মিউজিয়ামকে তিনি দান করে দেন এই ক্যানভাস।
তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও আবিষ্কৃত হয়েছে এমনই রহস্যময় চিত্রকলা। বছর দুয়েক আগে বত্তিচেল্লির আঁকা একটি ছবির নিচে হদিশ মিলেছিল ম্যাডোনা ও একটি শিশুর প্রতিকৃতির। একইভাবে পিকাসোর একটি পেইন্টিং-এর নিচে পাওয়া গিয়েছিল নগ্ন মহিলার প্রতিকৃতি। সেগুলিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি এখনও পর্যন্ত…
Powered by Froala Editor