ছোটোবেলা থেকে কখনও তুলি অথবা পেনসিল ধরেননি। ছিলেন প্রচণ্ড অনালাপী, মুখচোরা। সুযোগ হয়নি স্কুলের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করার। হেগস গ্যালারির মালিক ছিলেন তাঁর কাকার বন্ধু। সেই সূত্রেই ষোলো বছর বয়েসে জুটে যায় কাজ। কিন্তু এর পর একাধিকবার পাল্টেছেন নিজের কাজ। কখনোই ঠিক রাখতে পারেননি নিজের লক্ষ্য। আর ঠিক সেই কারণেই পরিবার থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। গৃহছাড়া হয়ে ২৭ বছর বয়সে প্রথম হাতে নিলেন তুলি। শুরু হল নতুন জীবন। সমস্ত অবসাদ ঢেলে দিতে থাকলেন ক্যানভাসে। কিন্তু সারা জীবন তাঁকে তাড়া করে বেড়িয়েছে স্কিৎজোফ্রেনিয়া, সিফিলিসের মতো একাধিক মানসিক রোগ। ভয় পেতেন সময় ফুরিয়ে যাওয়ার। ফুরিয়েও আসে তাঁর সময়। ১৮৯০ সালে, মাত্র ৩৭ বছরে আত্মহত্যা। আর এই দশ বছরের স্বল্প সময়ই তৈরি করে গেছেন ইতিহাস। তিনি আর কেউ নন, ভ্যান গঘ।
আরও পড়ুন
মিউজিয়াম থেকে চুরি গেল মোনালিসা, নকল ছবি বিক্রি করে কোটিপতি আর্জেন্টিনার ব্যবসায়ী
৩০শে মার্চ তাঁর জন্মদিন। আর সোমবার, জন্মদিনেই চুরি হল তাঁর আঁকা ছবি। তাঁর জীবনের গল্প পড়তে পড়তে যেমন অবাক হয়ে যেতে হয়। এও যেন তেমনই অদ্ভুত সমাতন। ঘটনাটি ঘটে অ্যামস্টারডাম শহরের বাইরে একটি ছোট্ট মিউজিয়াম, সিঙ্গার লরেন-এ। ভ্যান গঘ ‘দ্য স্প্রিং গার্ডেন’ নামের এই ছবিটার কাজ শেষ করেছিলেন ১৮৮৪ সালে। ভ্যান গঘের আঁকা এই ছবিটি, তুলনামূলকভাবে কম জনপ্রিয়। কিছুদিন আগেই উত্তর নেদারল্যান্ডের গ্রনিঞ্জার মিউজিয়াম থেকে সিঙ্গার লরেন মিউজিয়ামে আনা হয় ছবিটি। উদ্দেশ্য ছিল কিছুদিনের অস্থায়ী প্রদর্শনীর।
আরও পড়ুন
তিরিশ বছর বয়সে আঁকা শুরু, সুনয়নী দেবীর খ্যাতি পৌঁছেছিল খোদ বিলেতেও
সম্প্রতি চারিদিকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে কোভিড-১৯। সেজন্যেই বন্ধ রয়েছে সিঙ্গার লরেন মিউজিয়ামের প্রদর্শনী। ভোর সোয়া তিনটে নাগাদ চুরি হয় ছবিটি। বেজে ওঠে মিউজিয়ামের অ্যালার্মও। মিউজিয়ামের গার্ডদের পৌঁছানোর আগেই সরিয়ে ফেলা হয় ছবিটি। মাত্র চার থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে। তবে জানা গেছে এই ছবিটি ছাড়া অন্য কোনো ছবি চুরি যায়নি ওই মিউজিয়াম থেকে।
আরও পড়ুন
দৃষ্টিহীন বিনোদবিহারীকে নিয়ে তথ্যচিত্র বানালেন সত্যজিৎ, ক্যামেরার পিছনে সৌমেন্দু রায়
গ্রনিঞ্জার মিউজিয়ামের ডিরেক্টর ব্লাম জানান এই ছবিটির অন্য তাৎপর্য আছে। এটি এমন একটি সময়ের ছবি যখন ভ্যান গঘের শিল্পীসত্তার আভাস ফুটে উঠছে আস্তে আস্তে। ছবিটি আঁকা হয়েছিল নেদারল্যান্ডেই। প্যারিসে যাওয়ার আগে। ছবিটার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভ্যান গঘের জীবনের অনেক সংবেদনশীল মুহূর্ত। তাঁর বাবা ছিলেন একজন ধর্মযাজক। চার্চের সামনেই ছিল ছোট্ট বাগান। ‘দ্য স্প্রিং গার্ডেন’ প্রকৃতপক্ষে ভ্যান গগের আঁকা সেই ল্যান্ডস্কেপ।
আরও পড়ুন
৪৪,০০০ বছরের পুরনো গুহাচিত্র আবিষ্কার ইন্দোনেশিয়ায়, প্রাচীনতম কি এটিই?
ছবিটি চুরি যাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে পুলিশি তদন্ত। কিন্তু এখনও চিহ্নিত করা যায়নি কোনো সন্দেহভাজনকে। তদন্ত করছেন বিখ্যাত ডাচ তদন্তকারী আর্থার ব্র্যান্ড। যিনি প্রায় ১০০টি বিখ্যাত চুরি যাওয়া ছবির উদ্ধারকার্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, এই একই মিউজিয়াম থেকে আগেও দু’বার চুরি হয়েছিল ভ্যান গঘের ক্যানভাস। ২০০২ সালে চুরি যাওয়া সেই পেন্টিং ফেরানো সম্ভব হয়েছিল ২০১৬-তে। কিন্তু সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন শিল্পীর জন্মদিনে ছবি চুরি যাওয়া একটি ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আশ্বাস যোগান ‘দ্য স্প্রিং গার্ডেন’-কেও খুঁজে বার করার। এখন বিরল এই ছবিটি ফিরে আসবে কবে বা আদৌ উদ্ধার করা যাবে কিনা, সেটাই দেখার…