কয়েক কোটি মানুষের ওপর কার্যকর নয় ভ্যাকসিন, সতর্ক করলেন চিকিৎসকরা

মহামারীর শুরু দিন থেকেই যুদ্ধে নেমেছিলেন বিশ্বের তাবড় ভাইরোলোলজিস্ট ও বিজ্ঞানীরা। লক্ষ্য ছিল ভ্যাকসিন প্রস্তুতি। ধরে নেওয়া হয়েছিল মারণ ভাইরাসকে একমাত্র ঠেকাতে পারে গণ-টিকাকরণ প্রক্রিয়াই। কথাটা একেবারে ভুল নয়। তবে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। কিন্তু এর বাইরেও এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁদের দেহে কার্যকর নয় কোনো ভ্যাকসিনই। কাজ করে না ওষুধও। ফলত ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বাঁচার সম্ভাবনা অত্যন্তই ক্ষীণ। আর এই ধরণের ঘটনাই মূল চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসকদের।

বিজ্ঞানের পরিভাষায় বিষয়টিকে বলা হয় ‘ইমিউনোকমপ্রোমাইসড’। কথাটির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে অর্থ। হ্যাঁ, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে কোনোভাবেই তৈরি হয় না রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত হলেও তার প্রভাব থাকে কয়েক মাস পর্যন্ত। আর সেখানে দাঁড়িয়ে কোভিড তাঁদের কাছে সাক্ষাৎ যমদূত।

সম্প্রতি এই বিষয়টিতেই আলোকপাত করেছেন মার্কিন চিকিৎসক ডাঃ অ্যান্ড্রু ওয়ালোইটস। তিনি নিজেও ‘ইমিউনোকমপ্রোমাইসড’। আর সেই কারণেই গত একবছর ধরেই নিঃসঙ্গবাস করে চলেছেন তিনি। ইচ্ছা থাকলেও সামিল হতে পারছেন না কোভিড যুদ্ধে। বরং, বাড়িতে থেকেই জুম কলের মাধ্যমে নির্দেশ দিচ্ছেন সহ-চিকিৎসকদের। কিন্তু অ্যান্ড্রু জানাচ্ছেন, এই রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ নিজেরাই বিস্তারিত জানেন না বিষয়টি সম্পর্কে। ফলত, মহামারীকালীন সময়ে যে গৃহবন্দি থাকাই একমাত্র উপায়, সে ব্যাপারে এতটুকু ওয়াকিবহাল নন তাঁরা।

পরিসংখ্যান বলছে, খুব কম করে হলেও শুধু মার্কিন প্রদেশেই এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কয়েক মিলিয়ন। গোটা বিশ্বে কয়েক কোটি। কিন্তু এই অপ্রতিরোধ্যতার কারণ কী? গবেষকরা জানাচ্ছেন, আমাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতার পিছনে মূলত দায়ী থাকে শ্বেত রক্তকণিকা। আর সেই কোষের অভাবই এই পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয় আমাদের। বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রবণতা দেখা যায় ঠিকই, তবে অনেকক্ষেত্রেই তা জন্মগত। আবার ক্যানসার বা অন্য কোনো দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরেও হঠাৎ ‘ইমিউনোকমপ্রোমাইসড’ হয়ে যেতে পারেন কোনো ব্যক্তি। অনেকক্ষেত্রে শ্বেত রক্তকণিকার ঘাটতি না থাকলেও অ্যান্টিবডি তৈরির ক্ষমতা থাকে না রক্তকোষের। অতএব একই পরিণতি। 

আরও পড়ুন
করোনাকালে গৃহহীন ইংল্যান্ডের ৭ লক্ষ পরিবার!

সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নেওয়ার পরেও ৮০ শতাংশ ‘ইমিউনোকমপ্রোমাইসড’ মানুষের দেহে তৈরি হয়নি ভাইরাসের প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তবে কিছু ক্ষেত্রে মিরাকল-এর সাক্ষী থেকেছেন গবেষকরা। আর সেই কারণেই অন্ততপক্ষে প্রাথমিকভাবে টিকা নিয়ে রাখার পরামর্শই দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় অন্য কোনো বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি একেবারেই কি নেই?

আরও পড়ুন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় না মস্তিষ্ক, প্রমাণ দিলেন গবেষকরা

না, আছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা কোনো ব্যক্তির গ্লোবিউলিন সরাসরি প্রদান করা হলে সেরে উঠতে পারেন এই ধরণের রোগী। কিন্তু এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র গ্লোবিউলিনের আলাদা কোনো ব্লাডব্যাঙ্কই গড়ে তুলতে পারেনি মার্কিন প্রশাসন। আর ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে তা আকাশকুসুম স্বপ্নের মতোই। পাশাপাশি এই চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুলও। কাজেই, গৃহবন্দি থাকাই একমাত্র উপায় ভাইরাসের সঙ্গে এই অসম লড়াইয়ে টিকে থাকার…

আরও পড়ুন
ড্রপলেট নয়, করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত; জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা

Powered by Froala Editor

Latest News See More