যেদিকে দুচোখ যায়, শুধুই ঘন সবুজের চাদর বিছানো। হিমালয়ের বরফগলা জলে সারাবছর সতেজ হয়ে থাকে গাছগুলি। কিন্তু দূর থেকে দেখে যতটা মুগ্ধ হতে হয়, কাছে গেলে দেখা যায় দৃশ্যটি আদৌ তেমন নয়। ভিতরে ভিতরে শুকিয়ে যেতে শুরু করেছিল উত্তরাখণ্ডের তেহরি জেলার বনভূমি। আসলে এই বনভূমিকে বাঁচিয়ে রেখেছে যে হেবল নদী, তাই যে শুকিয়ে যাচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বিলুপ্তির হাত থেকে নদীটিকে ফিরিয়ে এনেছেন তেহরি জেলার মুখ্য বনাধিকারিক ধরম সিং মীনা। শুধু প্রকৃতিকে বাঁচানোই নয়, সেইসঙ্গে গ্রামাঞ্চলের কৃষিজীবী মানুষদের জীবীকাও বাঁচিয়ে দিয়েছেন তিনি। আর তাই এলাকার মানুষ তাঁর নাম রেখেছেন ‘ভাগীরথীজি’। সেই যে স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন রামায়ণের ভগীরথ, ধরম সিং-এর কাজও যে তার চেয়ে কিছু কম নয়।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮ হাজার ফুট উঁচুতে হেবল নদীর অববাহিকা। নদী বলতে, মোট ১৭টি ঝর্নার জল মিলে একটি জলস্রোত। ২৩টি গ্রাম পেরিয়ে গঙ্গার সঙ্গে মিশে গিয়েছে নদীটি। এই ২৩টি গ্রামের জলের একমাত্র উৎস হেবল নদী। তবে দৃশ্যটা ক্রমশ বদলাচ্ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তো ছিলই। এখন হিমালয়ের পাদদেশে বৃষ্টিপাতের স্বাভাবিক রীতিও বদলে গিয়েছে। আর তার সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন। পাহাড়ের গায়ে খননকার্য চালানোর ফলে ঝর্নাগুলি হারিয়ে যেতে বসেছিল। তার ওপর কলকারখানার আবর্জনা এসে নদীর পথ আটকে দিয়েছিল। এই বহুমুখী সংকটের হাত থেকে উদ্ধারের উপায় জানতেন না গ্রামবাসীরা। ঠিক এই সময় বছর চারেক আগে এলাকায় কাজের দায়িত্ব নিয়ে আসেন ধরম সিং মীনা।
দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার ৫ দিনের মধ্যেই হেবল নদীর কথা জানতে পারেন ধরম। আর শোনামাত্র সরকারি কাগজপত্র নিয়ে কাজ শুরু। দেখলেন, নদীটির যাত্রাপথের পুরোটাই বনবিভাগের সংরক্ষিত অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে। ফলে সমস্ত দায়িত্বটাই বনবিভাগের। সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করে দিলেন তিনি। বে-আইনি কারখানাগুলি বন্ধ করা থেকে শুরু করে হারাতে বসা ঝর্নাগুলি সংরক্ষণ, সবকিছুই করলেন একা। পাশাপাশি নদীর দুপাশে প্রায় ৬৯৭ হেক্টর জায়গাজুড়ে লাগানো হল ১০ লক্ষ গাছ। দেখতে দেখতে প্রাণ ফিরে এসেছে মৃতপ্রায় নদীতে। নদীর জলে আবার কৃষিকাজ শুরু করেছেন গ্রামবাসীরা। ধরম সিং মীনার মতো মানুষদের এই লড়াই হয়তো প্রকৃতিকে আরও কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারবে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
৮৫টি নদীর জল নিয়ে এশিয়ার প্রথম ‘জলের জাদুঘর’ বাংলাদেশে