ঠিক ২ সপ্তাহ আগেই বাজরার ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে কিছু উচ্চবর্ণের পুরুষের লালসার শিকার হয়েছিল দলিত মেয়েটি। তারপর থেকেই হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিল সে। অবশেষে লড়াইয়ের ইতি। দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে মঙ্গলবার সকালে মৃত্যু হল হাতরাস ধর্ষণকাণ্ডের ধর্ষিতা যুবতীর। একের পর এক ঘটনায় বারবার এভাবেই উঠে আসছে উত্তর প্রদেশের নাম। তাই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, উত্তরপ্রদেশের সামাজিক কাঠামোই কি নারীনির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনায় অনুঘটক হিসাবে কাজ করছে?
ধর্ষণের ঘটনা ভারতের কোনো রাজ্যেই খুব বিরল নয়। ইতিহাসে বারবার নানা নৃশংস ঘটনার সাক্ষী থেকেছে সমস্ত রাজ্যই। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের চেহারা অনেকটাই ভয়ঙ্কর। চলতি বছরের শুরুতেই ন্যাশানাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায় ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের ঘটনায় প্রথম স্থানে উত্তরপ্রদেশ। ২০১৭ সালে সারা রাজ্যে এরকম ৫৯ হাজারের বেশি কেস নথিভুক্ত হয়েছে। যে সংখ্যাটা তৃতীয় স্থানে থাকা পশ্চিমবঙ্গের থেকে প্রায় দ্বিগুণ। এমনকি উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধেও অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষণের মতো ঘটনায় কেস নথিভুক্ত না করার অভিযোগ এনেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। রিপোর্ট অনুযায়ী সারা দেশে ২৭ শতাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ অভিযোগ ফিরিয়ে দিয়েছে। আর উত্তরপ্রদেশে সংখ্যাটা ৪০ শতাংশের বেশি। এমনকি হাতরাস কাণ্ডেও প্রায় ৫ দিন পর্যন্ত অভিযোগ জমা নিতে চায়নি স্থানীয় পুলিশ স্টেশন। স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে বাকি থাকে না যে প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতাই এরকম ঘটনার বাড়বাড়ন্তে অনুঘটকের কাজ করছে।
উত্তরপ্রদেশের ধর্মীয় চেহারার মধ্যে মিশে থাকা জাতিবিদ্বেষও এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ধর্ষিতা মহিলা হয় দলিত অথবা আদিবাসী। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ধর্ষণ করার কথা তো রাজনৈতিক নেতারা প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেন। এমনকি, সে-রাজ্যে শিশুকন্যাদের প্রতি অত্যাচারের চেহারাটা খুব প্রকট। গত ৫ মাসেই অন্তত ৩টি ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষিতার বয়স ১৬ বছর বা তার চেয়ে কম। ২-৩ বছরের শিশুদের ধর্ষণ করার ঘটনাও নেহাত কম নয়। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষকদের আড়াল করার সচেতন প্রয়াস তো দেখাই যায়।
আমরা এখনও নিশ্চই কুলদীপ সিং সেঙ্গারের কথা ভুলে যাইনি। বছর দুয়েক আগে উন্নাও শহরের ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে সারা দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল। অভিযোগ উঠেছিল খোদ শাসক দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে। অদ্ভুতভাবে তখন সে-রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও দেখা গিয়েছিল নিজের দলের সদস্যের পাশে দাঁড়াতে। দলের অন্যান্য সদস্যরাও সেদিন কুলদীপের সমর্থনে মিছিল পরিচালনা করেছিলেন। কুলদীপের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয় গতবছরের শেষেই। কিন্তু উন্নাও-এর ক্ষত আজও ভুলতে পারেনি উত্তরপ্রদেশ। একের পর এক ঘটনায় বারবার উঠে আসছে এই একটি রাজ্যের নাম। সরকার, প্রশাসন প্রত্যেকের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। আদৌ কি এই ভয়ঙ্কর ব্যাধি থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে পারবে উত্তরপ্রদেশ? সন্দেহ থেকে যায়। সত্যিই কি ধর্ষণ এবং নারীনির্যাতনের মতো ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার কোনো ইচ্ছা আছে ক্ষমতাসীন মানুষদের?
আরও পড়ুন
ধর্ষণে অভিযুক্তের জামিন, নিজের গায়েই আগুন দিলেন ক্ষুব্ধ তরুণী
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
আরও পড়ুন
রক্ষকই ভক্ষক, ধর্ষণের অভিযোগ প্রাক্তন পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ধর্ষণ কারা করে, কারাই বা বাঁচাবে, শাস্তিতেই সমাধান - উত্তর আসবে না?