লকডাউনের মধ্যেই তৈরি হল যুদ্ধ-পরিস্থিতি। দক্ষিণ চিন সাগরের বিতর্কিত অঞ্চলে আমেরিকার যুদ্ধজাহাজ ঢুকে পড়ায়, মাথা চাড়া দিয়ে উঠল সীমান্তবর্তী উত্তেজনা। যুদ্ধ-বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, খারাপ হতে পারে চিন এবং আমেরিকার সম্পর্ক। এই ঘটনা তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ওই বিতর্কিত অঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে তৈল খননের কাজ চালাচ্ছিল মালয়েশিয়ান স্টেট ওয়েল কোম্পানি। পিছু নিয়েছিল চিনের একটি যুদ্ধজাহাজ। এদিন যুক্তরাজ্যের একটি অ্যাসল্ট শিপ এবং একটি মিশাইল ক্রুশার ওই অঞ্চলে প্রবেশ করে। ঘিরে ফেলে চিনের জাহাজটিকে। পরে ঘটনাস্থলে যোগ দেয় আরও একটি আমেরিকার রণতরী এবং অস্ট্রেলিয়ার যুদ্ধজাহাজ। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আরো বেশ কিছু অস্ট্রেলিয় এবং চিনা যুদ্ধ জাহাজ সক্রিয় করা হয়েছে ওই অঞ্চলের আশেপাশে।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ চিন সাগর বিশ্বের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ জলপথগুলির মধ্যে একটি। বিশ্বে, জাহাজের মাধ্যমে রপ্তানির মোট পরিমাণের এক-তৃতীয়াংশই হয় এই পথে। তাই ওই অঞ্চলে অধিকার বিস্তার করতে দীর্ঘ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে চিন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া।
তবে এই ঘটনার পিছনে রয়েছে চিনের অন্য কৌশল। এমনটাই জানান অস্ট্রেলিয়ার এক প্রতিরক্ষা বিভাগের আধিকারিক। এই সময়ে করোনা ভাইরাসের মহামারীর সুযোগ নিয়ে ক্ষমতা বাড়াতে চাইছে চিন। চাইছে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের ছন্দপতন করাতে।
গত বছরের শেষের দিকেই চিনে ছড়িয়ে পড়েছিল করোনা ভাইরাস। জানুয়ারির শেষের দিকে এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। ওই সময়ে চিন সরকারের কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ যাতায়াত বাড়ায় দক্ষিণ চিন সাগরে। আটক করে বেশ কিছু মৎস্যজীবীকে। এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক আবহাওয়া গরম হয়ে উঠেছিল তখনই। এই মাসের শুরুতেও এমন ঘটনা ঘটে। ভিয়েতনাম দাবি করেছিল, চিনের যুদ্ধজাহাজের আক্রমণে একটি ট্রলার ডুবে গেছে।
গতমাসে চিন দুটি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করেছিল কৃত্রিম কোরাল প্রাচীরের কাছেই। তবে এই গবেষণাকেন্দ্র দুটিতে রয়েছে সামরিক প্রতিরক্ষা। রয়েছে বিমান চলাচলের জন্য রানওয়েও। ফিলিপাইন এবং অন্যান্য পারিপার্শ্বিক দেশগুলি জানিয়েছে সেই কথা।
আমেরিকা ওই অঞ্চলের চিনের জাহাজের আকস্মিক চলাচলকে ‘গুণ্ডামি’ বলেই কটাক্ষ করে। তবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে বেজিং। চিনের দাবি, স্বাভাবিকভাবেই ওই জাহাজ সীমান্ত অঞ্চলে পর্যবেক্ষণ করছিল। আমেরিকার পাশাপাশি ভিয়েতনাম-ও আওয়াজ তুলেছে চিনের বিরুদ্ধে। বিতর্কিত অঞ্চলে পারসেল এবং স্প্র্যাটলি দ্বীপে দুটি রাজ্য স্থাপন করেছে চিন। ভিয়েতনামের এই দাবিকে যদিও উড়িয়ে দিয়েছেন চিনের আধিকারিকরা।
অন্যদিকে চিনকে সামরিক জাহাজ সরিয়ে নিতে বলা হলেও, চিন তা অস্বীকার করেছে। ফলে দক্ষিণ চিন সাগর ঘিরে বেশ কয়েকটি দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জট পাকাচ্ছে। এই মহামারীর মাঝে যা ত্বরান্বিত করতে পারে যুদ্ধ-পরিস্থিতিকে।