মানুষের কঙ্কাল দিয়ে অন্দরসজ্জা ‘সঙ্গীতশিল্পী’-র!

সত্তরের দশকের শুরুর দিক। প্রথাগত সুরময় সঙ্গীতকে পাশে সরিয়ে পাশ্চাত্যে জন্ম নিয়েছিল এক অভিনব সঙ্গীতের ঘরানা। সেই গানের প্রেক্ষাপট হিসাবে উঠে এসেছিল রক্তপাত, যুদ্ধ, অবিচার, মানসিক দ্বন্দ্ব, মাইথোলজি, নাৎসিজম, নাস্তিকতা, স্যাটানিজম বা নরকপ্রীতি, মাদকদ্রব্য-সহ বহু অন্ধকার বিষয়। সুরেলা কণ্ঠস্বরের পরিবর্তে সেখানে জায়গা করে নিয়েছিল চিৎকার, ডিসটর্ডেড যন্ত্রসঙ্গীত, জটিল সুরবিন্যাস। প্রচলিত মতবাদকে চ্যালেঞ্জ জানানোই ছিল এই বিশেষ জঁরের প্রধান লক্ষ্য।

মেটাল মিউজিক (Metal Music)। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে সঙ্গীতের এই বিশেষ জঁর নিয়ে বার বার বিতর্ক উঠেছে বিশ্বজুড়ে। বিতর্কে জড়িয়েছেন তাবড় সঙ্গীতশিল্পী থেকে শুরু করে মেটালভক্তরা। এবার ফের একবার চর্চায় উঠে এলেন যুক্তরাষ্ট্রের এক মেটালপ্রেমী। শুধু চর্চাই নয়, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর হাতে গ্রেপ্তারও হতে হল তাঁকে। কী ছিল তাঁর অপরাধ? 

জেমস উইলিয়াম নট (James William Nott)। কেন্টাকির এই ব্যক্তি আঞ্চলিক সঙ্গীতমহল, থুড়ি ‘মেটাল সার্কেল’-এ পরিচিত ‘দ্য গ্রিম রিপার’ নামে। কৈশোর থেকে মেটাল-প্রীতির কারণেই মানব কঙ্কালের প্রতি তীব্র আকর্ষণ জন্মেছিল উইলিয়ামের। মাথায় চেপে বসেছিল এক অদ্ভুত স্বপ্ন। মানব কঙ্কালে সাজিয়ে তুলবেন নিজের বাড়ি। সুযোগও চলে এসেছিল হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর। পরবর্তীতে সেখানে মানব কঙ্কাল চুরি ও পাচার করার চক্র গড়ে তোলেন উইলিয়াম। এর আগে একাধিকবার রহস্যজনকভাবে কঙ্কাল উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে হার্ভার্ড মেডিক্যাল কলেজে শোরগোল হলেও ধরা পড়েননি উইলিয়াম।

নিজের বাড়িকে খুলি দিয়ে সাজিয়ে তোলা তো বটেই, ইন্টারনেটে ‘উইলিয়াম বার্ক’ নাম ব্যবহার করে মানব কঙ্কাল বিক্রি করার ব্যবসা খুলে বসেছিলেন ৪০ বছর বয়সি মার্কিন ব্যক্তি। তাও আবার ডার্ক-ওয়েব কিংবা কোনো গোপন ওয়েবসাইট নয়, বরং ফেসবুক মার্কেটপ্লেসেই এই ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন তিনি। কিছুদিন আগে বিষয়টি নজরে আসে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার। শুরু হয় তদন্ত। সেই তদন্তের সূত্রেই বেরিয়ে আসে উইলিয়ামের আসল পরিচয়। 

উইলিয়ামের কেন্টাকির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ইতিমধ্যেই ৪০টির বেশি মানবখুলি উদ্ধার করেছে এফবিআই। পাওয়া গেছে বেশ কিছু নিতম্বের হাড়, পাঁজরের খাঁচা এবং অন্যান্য অঙ্গও। তাছাড়াও তাঁর ওয়াশিংটনের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় আরও ৫টি আস্ত মানব কঙ্কাল। সেইসঙ্গে একে-৪৭ সহ একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র বোঝাই আস্ত ব্যাগ। অন্যদিকে মানুষের হাড় ছাড়াও মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস কিংবা লিভারও ফর্মালিনে সংরক্ষণ করে বিক্রি করেছেন তিনি, সে-ব্যাপারেও যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। উইলিয়াম ছাড়াও এই কঙ্কাল পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাঁর বন্ধু জেরেমি পাওলি। তাছাড়া হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের মর্গের দুই কর্মীও জড়িত ছিলেন এই আশ্চর্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। 

এই ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে মেটাল সঙ্গীতের যোগ না-থাকলেও, নিজের মেটাল-প্রীতিকেই এই কর্মকাণ্ডের প্রধান উপলক্ষ হিসাবে উপস্থাপন করেছেন উইলিয়াম। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর এই বক্তব্য থেকেই মেটাল-গঞ্জনায় নতুন করে সরব হয়েছেন মার্কিন মুলুকের সঙ্গীতজ্ঞদের একাংশ…

Powered by Froala Editor