চিরশত্রু বলতেই যেন আজও মনে হয় আমেরিকা আর রাশিয়ার কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেই যে ঠান্ডাযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, সোভিয়েত ভেঙে গেলেও তার রেশ এখনও চলছে। এর মধ্যেই মার্কিন সরকার একসঙ্গে ১০ জন রুশ রাষ্ট্রদূতকে সাসপেন্ড করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেইসঙ্গে কয়েক ডজন রুশ বাণিজ্য সংস্থাকেও আমেরিকায় ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। রাশিয়া এবং আমেরিকার এই কূটনৈতিক তরজা কি আবারও দুই শিবিরে ভাঙতে চলেছে পৃথিবীকে? ঠিক এই প্রশ্নটাই তুলছেন বহু বিশেষজ্ঞ।
মাত্র কয়েক মাস আগে মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন জো বাইডেন। ক্ষমতায় এসে প্রথমেই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রক্রিয়া শেষ হতেই এবার আরও এক সাহসী বিদেশনীতি নিলেন তিনি। আর এই সিদ্ধান্তের মূলেও সেই নির্বাচন। কিছুদিন আগেই মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যাতে দেখা যায় বিগত নির্বাচনে বেশ কিছু দেশ নিজেদের সাধ্যমতো নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। এমনকি এই তালিকায় বাদ যায়নি ভারতও। তবে প্রায় গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যেই কোনো না কোনোভাবে প্রভাব রাখার চেষ্টা করেছিল রাশিয়া। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে বেশ কিছু গুপ্তপ্রচার গড়ে উঠেছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছিল রাশিয়ার মদত।
এমনিতেই বাইডেন এবং পুতিনের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বিস্তর। বেশ কিছুক্ষেত্রে দুজন দুজনের সম্পর্কে মন্তব্য করার সময় আন্তর্জাতিক সৌজন্যবিধিও লঙ্ঘন করেছেন। কিছুদিন আগেই একটি টিভি শো-তে বাইডেন সরাসরি জানিয়েছিলেন, তিনি গণহত্যার অভিযোগে পুতিনকে খুনি বলে মনে করেন। আবার জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর বিচার প্রসঙ্গে পুতিনও একহাত নিয়েছেন। তাঁর মতে, বাইডেন আমেরিকা থেকে বর্ণবৈষম্য অপসারণের কোনো চেষ্টাই করছেন না।
অবশ্য মার্কিন সেনেট থেকে রুশ রাষ্ট্রদূত সাসপেন্ড হওয়ার ঘটনা ইতিহাসে নতুন নয়। বারাক ওবামা, এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়েও এমন ঘটনা বহুবারর ঘটেছে। অবশ্য বাইডেন জানিয়েছেন, আপাতত এর থেকে বেশি দূরত্ব বাড়াতে চান না তিনি। এই সিদ্ধান্তটি নেওয়ার আগেও তিনি পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। পুতিন বিষয়টা স্বীকার করলেই তিনি অন্যভাবে ভাবতেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে ভবিষ্যতে আমেরিকার আভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাশিয়া প্রভাব বিস্তার করতে চাইলে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। অবশ্য পাশাপাশি বেশ কিছু রুশ বাণিজ্য সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিতে বড়ো প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে রুশ সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক এবং রাশিয়ান ন্যাশানাল ওয়েলথ ফান্ড অ্যান্ড ফিনান্সের মতো বেশ কিছু বড়ো সংস্থা রয়েছে।
আরও পড়ুন
বাইডেন-কে নির্বাচনে হারাতে চেয়েছিল রাশিয়া!
আমেরিকা ও রাশিয়ার এই দ্বন্দ্ব আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, এখন সেটাই আলোচনার বিষয়। তবে এখনও অবধি তৃতীয় কোনো দেশ থেকে এই ইস্যুতে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন
এক শতকে ৩ বার নামবদল, রাশিয়ার পিটার্সবার্গকে নিয়ে কমতি নেই বিতর্কের
Powered by Froala Editor