Powered by Froala Editor
ব্রিটিশ হামলা থেকে স্বাধীন দ্বীপের দাবি – এর আগেও বহুবার আক্রান্ত হয়েছে মার্কিন ‘ক্যাপিটল’
১/১০
অকুস্থল ওয়াশিংটন ডিসি। হোয়াইটহাউস থেকে খানিকটা দূরেই চলছিল সভা, পথযাত্রা। সেখানেই উস্কানিমূলক মন্তব্য করলেন দেশের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর সেই প্ররোচনায় ক্ষেপে উঠল সমর্থক-জনতা। আক্রমণ করল যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা অর্থার কংগ্রেস ভবন ‘ক্যাপিটল’কে। দাঙ্গায় এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ৪ ব্যক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সাক্ষী থাকল ইতিহাসের এক লজ্জাজনক অধ্যায়ের। তবে এটাই প্রথম নয়, এর আগেও বহুবার আক্রান্ত হয়েছে মার্কিন আইনসভা ‘ক্যাপিটল’।
২/১০
বিশ্বের তাবড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও নিন্দা করেছেন ট্রাম্পের এই আচরণকে। ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বোরিস জনসনও। তবে ‘ক্যাপিটল’ প্রথমবারের জন্য আক্রান্ত হয়েছিল ব্রিটিশ বাহিনীর দ্বারাই। সেটা ছিল ১৮১৪ সাল। ১৮১২ সালের ব্রিটিশ-মার্কিন যুদ্ধের সময়ই ঘটেছিল সেই নক্কারজনক ঘটনা। তখনও সম্পূর্ণভাবে নির্মিত হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা। ব্রিটিশ মেজর রবার্ট রস এবং ভাইস অ্যাডমিরাল আলেকজান্ডার ককবার্নের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বাহিনী আগুন ধরিয়ে দেয় ‘ক্যাপিটল’-এ।
৩/১০
তবে শুধু ক্যাপিটলই নয়, হোয়াইট হাউস-সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলিকেই প্রায় ধ্বংস করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশরা। ১৮১৪ সাল এখনও মার্কিন ইতিহাসের এক কলঙ্ক হয়ে রয়ে গেছে। মার্কিন ইতিহাসে কেবলমাত্র এই একবারই রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি চলে গিয়েছিল বিদেশি শক্তির হাতে। এই ঘটনার ২০০ বছর পরে ২০১৪ সালে ব্রিটিশ দূতাবাস থেকে সেই ছবি ট্যুইট করে ক্ষমাপ্রার্থনা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে।
৪/১০
এর পর ব্রিটিশদের আক্রমণের প্রায় এক শতাব্দী পরে ১৯১৫ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য আক্রান্ত হয় ‘ক্যাপিটল’। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জার্মান অধ্যাপক এরিক মুন্টের দায়ী ছিলেন এই হামলার পিছনে। সেনেটের অভ্যর্থনা কক্ষে পর পর তিনটি ডিনামাইট বিস্ফোরণ করেন তিনি। বিস্ফোরণে কংগ্রেস ভবনের মারাত্মক ক্ষতি এবং বেশ কিছু ব্যক্তি আহত হলেও মারা যাননি কেউ।
৫/১০
তখন চলছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। মুন্টেরের দাবি ছিল মহাযুদ্ধে ব্রিটেনকে অস্ত্র এবং অর্থ দিয়ে সহায়তা করছেন মার্কিন ফাইনান্সাররা। তাই শান্তির আবেদন চেয়েই এই প্রতিক্রিয়া তাঁর। এই আক্রমণের একদিন পরে এক মার্কিন ফিনান্সার জে.পি. মরগানকে গুলি করে হত্যা করেন তিনি। তারপরই গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির হারের পরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন এই ‘ক্ষ্যাপাটে’ অধ্যাপক।
৬/১০
এর পর ১৯৫৪ সালের ১ মার্চ আরও একবার হিংসার সাক্ষী হয় ‘ক্যাপিটল’। চার পুয়ের্তো রিকান দ্বীপের প্রতিনিধি কংগ্রেস ভবনে একটি বৈঠক চলাকালীন দ্বীপের জাতীয় পতাকা টেনে নামিয়ে দেন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত রাজ্যের পতাকার সংগ্রহ থেকে। স্বাধীনতা দাবি করে স্লোগান তোলেন ‘ফ্রিডম ফর পুয়ের্তো রিকো’। তাঁদের বাধা দিতে গেলে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে ঘটনাস্থল। আস্তিনে লুকিয়ে রাখা বন্দুক থেকে এলোপাথাড়ি গুলি চালান তাঁরা।
৭/১০
তবে সেই হামলায় বেশ কিছু মানুষ আহত হলেও কেউ মারা যাননি। পুয়ের্তো রিকান নেতৃ লোলিটা লেবারন গ্রেপ্তারের সময় জানান, নিজে মরতে এসেছিলেন পুয়ের্তো রিকোর জন্য, কাউকে মারার জন্য আসেননি তিনি। লেবারনকে ৫০ বছরের ও বাকিদের ৭৫ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট। পরে অবশ্য রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপে পড়ে ‘মানবিক’ সিদ্ধান্ত নেন। প্রত্যেক আন্দোলনকারীদেরই মুক্তি দেওয়া হয়।
৮/১০
আটের দশকে গ্রানাডা এবং লেবাননের পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পাঠানো হয় মার্কিন সেনা। তবে মার্কিন বাহিনীর অবস্থান এবং হস্তক্ষেপ খুব একটা ভালো চোখে দেখেনি আন্দোলনকারীরা। ফলে ১৯৮৩ সালে শেষ বারের জন্য তার মাশুল গোনে ‘ক্যাপিটল’। ৭ নভেম্বর সেনেটের দ্বিতীয় তলায় ঘটে যায় ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের কয়েক মিনিটের আগে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি সতর্ক করেছিল ‘আর্মড রেসিস্ট্যান্ট ইউনিট’ নামে পরিচিত একটি বামপন্থী দল হামলা চালাবে।
৯/১০
পরে এফবিআইয়ের তদন্তও নিশ্চিত করে সেই সতর্কতা ভাঁওতা ছিল না। ১৯৮৮ সালে এফবিআই এজেন্টরা ৮৩-এর ক্যাপিটল হামলা এবং ১৯৮৪ সালের ফোর্ট ম্যাকনেয়ার এবং ওয়াশিংটন নেভি ইয়ার্ডের দুটি পৃথক বিস্ফোরণের জন্য গ্রেপ্তার করেন ‘রেসিস্ট্যান্ট কনস্পিরেসি’ নামের একটি সশস্ত্র দলের সাত সদস্যকে। ১৯৯১ সালে তাঁদের সরকারি সম্পত্তির ভয়াবহ ক্ষতি করার জন্য আজীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। তবে বর্তমানে সকলেরই শাস্তি কমিয়ে মুক্তি দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন...
১০/১০
নতুন বছরের শুরুতেই আরও একবার ‘ক্যাপিটল’ হামলা মনে করিয়ে দিল সেই সব ক্ষতচিহ্নের কথাই। তবে পূর্ববর্তী আক্রমণগুলিকেও কি ছাপিয়ে গেল ট্রাম্পের প্ররোচনা? আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে বারবার উঠে আসছে এই প্রশ্নই। কারণ এখনও অবধি চারবার ক্যাপিটল হামলার শিকার হলেও কোনোবারেই প্রাণ যায়নি কারোর। অথচ সাম্প্রতিক ‘গৃহযুদ্ধ’ পরিস্থিতিতে মারা গেলেন চার নাগরিক। যা নিঃসন্দেহে একটা কালো অধ্যায় মার্কিন ইতিহাসের...