যাঁরা আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলির সম্পর্ক খোঁজখবর রাখেন, ‘প্যাটাগোনিয়া’ (Patagonia) নামটা তাঁদের অনেকের কাছেই পরিচিত। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে প্রায় ১৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ব্যবসা এই আমেরিকান সংস্থার। দিন কয়েক আগের কথা। প্রয়াত হয়েছিলেন এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা তথা অন্যতম মার্কিন বিলিয়নেয়ার ইভন চৌইনার্ড (Yvon Chouinard)। যাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় ১২০ কোটি মার্কিন ডলার। তবে তাঁর চোখ বোজার পরেই, তা এক ধাক্কায় নেমে এল শূন্যতে।
না, সাইবার হামলা কিংবা ডাকাতি নয়। পাঁচ দশক ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা সম্পত্তির পাহাড়কে পরিবেশ রক্ষার (Climate Fight) জন্য দান করে গেলেন মার্কিন ধনকুবের। মৃত্যুর পর তাঁর জমানো অর্থে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে, এমনটাই চাইতেন তিনি। সেই ইচ্ছাকেই স্বীকৃতি দিল তাঁর পরিবার। কর্মীদের পারিশ্রমিক ও উৎপাদনের খরচ বাদ দিলে, সংস্থার যে মোট বার্ষিক লাভ, তা দিয়েই চলবে বৃক্ষরোপণ, অরণ্য ও জীববৈচিত্র রক্ষা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। এখানেই শেষ নয়, মৃত্যুর পর ইভনের মতো পরিবেশের জন্য সমস্ত সম্পত্তি দান করার কথা আগে থেকে জানিয়ে রাখলেন তাঁর স্ত্রী এবং দুই সন্তানও।
আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ-ষাট বছর আগের কথা। তরুণ ইভন তখন রক-ক্লাইম্বিং ও ট্রেকিং করে বেড়াতেন গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। তবে রক-ক্লাইম্বিং-এর ক্ষেত্রে বিশেষ জুতো কিংবা অন্যান্য সামগ্রীর জন্য বাজারচলতি ব্র্যান্ডের ওপর তাঁর ভরসা ছিল না কোনোদিনই। নিজের পর্বতারোহণের স্পাইক জুতো কিংবা জ্যাকেট নিজেই তৈরি করতেন তিনি। বন্ধুমহলে যথেষ্ট জনপ্রিয়তাও পায় তাঁর এই উদ্ভাবনী। এর বছর কয়েক পর ১৯৭৩ সালে ‘প্যাটাগোনিয়া’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তবে তখনও পর্যন্ত প্যাটাগোনিয়া ছিল স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ড। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তাঁর ব্যবসার পসার জমে ফ্যাশন জগতেও।
তবে এই দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরেই পরিবেশ রক্ষার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জলদূষণ ও মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ হয়ে থাকে পোশাক কারখানার জন্য। তাই কম জল এবং পরিবেশবান্ধব রং-এর ব্যবহারে পোশাক উৎপাদন করে এসেছে প্যাটাগোনিয়া। তাতে উৎপাদনের খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। একইভাবে বেড়েছে উৎপাদিত সামগ্রীর বাজারমূল্যও। তবে ইভন গর্ব করেই বলতেন, তাঁদের তৈরি পোশাকের ওপর ভরসা করে কাটিয়ে দেওয়া যায় কয়েক দশক। বলত গেলে, ক্রেতাদের বাড়তি পোশাক কিনতে রীতিমতো বাধা দিতেন মার্কিন ধনকুবের। এমনকি পুরনো জামাকাপড়ের মেরামতিও করত তাঁর সংস্থা প্যাটাগোনিয়া। আজও তাঁদের বাণিজ্যিক ট্যাগলাইন ‘ডোন্ট বাই দিস জ্যাকেট’।
পণ্যের দাম কম রাখলে আজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির বিলিয়নেয়রদের টেক্কা দিতেন ইভন, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। তবে ব্যবসার থেকে চিরকাল পরিবেশকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। প্রকৃতির সঙ্গে কৈশোর থেকে নিবিড় যোগাযোগ থাকার জন্যই হয়তো। বিশ্বাস ছিল, পৃথিবীই সবচেয়ে বড়ো শেয়ারহোল্ডার। জীবিত থাকাকালীন একাধিক নজির গড়েছিলেন ইভন, এবার মৃত্যুর পরেও তৈরি করে গেলেন এক আশ্চর্য কাল্ট…
Powered by Froala Editor